২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৫৯
Exif_JPEG_420

চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায়ীরা অথৈ সাগরে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘রাতে চিন্তায় ঘুমাইতে পারি না। ঘুমটা আইবো কেমনে, কন? ছেলেমেয়ে গো স্কুলের খরচ, বাসা ভাড়া, খাওয়াদাওয়ার খচর, এছাড়াও এইটা সেইটা আরও কত কী। খরচের খাতের কোনো শেষ আছে। সবই কেনা। এমনিতেই গত কয়েক বছর ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ যাচ্ছে। তার উপর ট্যানারি বন্ধ করায় যেইটা ছিল সেটাও শেষ।’ রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার শেরে বাংলা রোডের লেদার পণ্যের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলছিলেন তার দুর্দশার কথা। তাঁর দোকানে লেদার পণ্যে ঠাঁসা। কি নেই তাঁর দোকানে?

হাতে বানানো বিভিন্ন ডিজাইনের পাকা চামড়া দিয়ে তৈরি পাদুকা থেকে শুরু করে লেদার জ্যাকেট, অফিস ব্যাগ, মানিব্যাগ, পার্স, বেল্ট, স্কুলের ব্যাগ ছাড়াও রয়েছে মেয়েদের ব্যবহৃত ব্যাগ। একটা সময়ে তাঁর ব্যবসা ভালোই ছিল। ব্যবসা একা সামলাতে না পেরে দুজন কর্মচারীও রাখেন। তাও হিমশিম খেতে হতো। ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার তাদের না করে দিতে বাধ্য হন। এখন একাই সামলে নিচ্ছেন ব্যবসা। একা সামলে নিতে পারবেন না কেন। ক্রেতা থাকলে তো!

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসা মানুষকেন্দ্রিক। যেখানে মানুষের চলাচল বেশি সেখানে কমবেশি ব্যবসা হবেই। হাজারীবাগে মানুষের চলাচল কমে গেছে। সারা বাংলাদেশের কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা এখানে আসতো। তারা এলে কিছু একটা তো কিনতই। ট্যানারি সরিয়ে নেওয়াতে ব্যবসা একদম শেষ।’

সরকারি উদ্যোগে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প নিয়ে যাওয়া হয় সাভারের হেমায়েতপুরে। ট্যানারির সকল কার্যক্রম এখন সেখানেই চলছে। কিন্তু রয়ে গেছে হাজারীবাগের ট্যানারি ঘিরে গড়ে ওঠে ছোট-বড় চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসা।

এসব লেদার পণ্যের ক্রেতা ছিলেন ট্যানারির ব্যবসায়ীরা, বিদেশি বায়ার, ব্যাংক, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন বিমা কোম্পানির কর্মকর্তারা। ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর ট্যানারির মালিকেরাই এখানে খুব একটা আসেন না। অন্যরা আসবে সেটা কল্পনা করা আশায় গুড়েবালির মতো অবস্থা।

সরেজমিনে আরও কয়েকটি লেদার পণ্যের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই হতাশার গল্প শোনান। তাঁরা প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করেন। আশায় থাকনে। ক্রেতা আসবে। কিন্তু ক্রেতা আসে না। বিক্রিও হয় না।

শোভন লেদার স্টোরের মালিক রাজিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থা পথে, বেঁচাকেনা খুব খারাপ। স্হানীয় কাস্টমাররা সুযোগ বুঝে ১২০০ টাকার জিনিস চায় ৬০০টাকা। তাছাড়াও নতুন করে একটা সমস্যা হলো যাতায়াত কস্টিং বেড়ে গেছে। হেমায়েতপুর থেকে কাস্টিং চামড়া নিয়ে আসতে যে টাকা খরচ হয়, লেবার কস্ট, দোকান ভাড়া ও আমাদের পরিশ্রম সব মিলিয়ে আমাদের ব্যবসা নাই বললেই চলে।’

ট্যানারির সকল কার্যক্রম হেমায়েতপুরে হওয়ায় পাকা চামড়ার জন্য সেখানে যেতেই হয় লেদার ব্যবসায়ীদের। এতে তাদের পরিশ্রম, সময় ও ব্যয় বেড়েছে আগের চেয়ে অনেকখানি। অথচ আগে পাকা চামড়া হাত বাড়ালেই পাওয়া যেত।

আরেক ব্যবসায়ী মীম লেদারের কর্ণধার বাবু বলেন, ‘ব্যবসা এমনিতেই ভালো না। সবচেয়ে পুরান ট্যানারি চলে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসার উপর ভালো প্রভাব পড়েছে। আমাদের ক্রেতা ছিল কোম্পানির মালিক ও বিদেশি বায়াররা। মালিকরা বিদেশি বায়ারদের গিফট করার জন্য আমাদের থেকে পণ্য নিত। এখন ব্যবসা খারাপ গেলেও আশা করি সামনে ভালো দিন আসবে। কারণ অনেক ট্যানারির মালিক নতুন করে ফুটওয়ার ব্যবসা চালু করেছে।’

বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্যানারি ভবনগুলোতে নতুন করে প্রাণ দেয়ার চেষ্টাও শুরু হয়ে গেছে হাজারীবাগে। এবার আর কাঁচা চামড়ার কারবার নয়। সেখানে পাকা চামড়া দিয়ে তৈরি হবে পাদুকা ও পাদুকা পণ্য। ইতিমধ্যে সেই উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে। হাজারীবাগ বাজার, শেরেবাংলা রোড ও মনেশ্বর রোড, যেখানে গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় আড়াইশ ট্যানারি,অনেকেই এখানে সরকার থেকে অনুমতি নিয়ে ফুটওয়্যারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই কার্যক্রম চালাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টার মতো ট্যানারির মালিক।

হাজারীবাগে বন্ধ ট্যানারিতে ফুটওয়ার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় ফুটওয়ার ব্যবসাকে আর্শীবাদ হিসেবে দেখছেন লেদার পণ্যের ব্যবসায়ীরা। হয়তো আবার হেসে উঠবে লেদার পণ্যের ব্যবসা। হেসে উঠবে ব্যবসায়ীরা। এতো অদূর ভবিষ্যতের কথা। কিন্তু তাদের সব চিন্তা এখন বর্তমানকে ঘিরে। কারণ বর্তমানে তাঁরা ভালো নেই।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :আগস্ট ৫, ২০১৭ ১:১৭ অপরাহ্ণ