নিজস্ব প্রতিবেদক:
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী এসব মানুষের প্রকৃত সংখ্যা জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি চিহ্নিত ৩০টি পাহাড়ে কম পক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের প্রকৃত সংখ্যা জানা মুশকিল। কারণ যারা পাহাড়ে বসবাস করেন তারা অবৈধভাবে থাকছেন। তাদের সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তবে ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার বসবাস করছে।’ এর মধ্যে এক মতিঝর্ণা পাহাড়েই দুই হাজারের বেশি পরিবার বসবাস করছে বলে জানান তিনি।
প্রতিবছর বর্ষা এলে পাহাড়ে উচ্ছেদের তোড়জোড় শুরু করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তাতেও থামছে না ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। অভিযান শেষ হলে আবারও সেখানে ফিরে যান বসবাসকারীরা। স্থায়ী পুনর্বাসন ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন বাড়ছে এ বসতি। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
জানা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করতে গিয়ে গত এক যুগে কম পক্ষে দুই শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ২০০৭ সালে। ওই বছর ১১ জুন পাহাড় ধসে ১২৯ জনের মৃত্যু ঘটে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রামে ৩০টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ জুনের পাহাড় ধসের পর ১২টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই বছরই আরও একটি এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে আরও ১৭টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত এই ৩০টি পাহাড়ের মধ্যে নগরীর ১১টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস ছয়শ ৬৬টি পরিবারের। এর মধ্যে লালখান বাজার এলাকায় মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে তিনশ ২০টি, একে খানের মালিকানাধীন পাহাড়ে এক ৮৬টি, ইস্পাহানী পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে পাঁচটি, লেকসিটি এলাকায় ১২টি, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি এলাকায় ২৭টি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে ২২টি, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে ১১টি, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকার কাছে পাহাড়ে নয়টি, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে ৩৮টি, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে তিনটি ও জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩টি পরিবার বসবাস করছে।
তবে পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের প্রকৃত সংখ্যা সিটি করপোরেশনের এই পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি। অনেক পাহাড় রাজনৈতিকভাবে দখল করে সেখানে ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে রেখেছে প্রভাবশালীরা। পাহাড়ের এসব ঘরে ভাড়া কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো ঝুঁকে পড়ছে পাহাড়ে বসবাসের দিকে। স্থায়ী ও কঠোর কোনও উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বাড়ছে।
৩০টি পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারের প্রকৃত সংখ্যা জানতে চাইলে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারীদের প্রকৃত কোনও পরিসংখ্যান নেই। তারা অবৈধভাবে পাহাড়ে বসবাস করছে।’
এসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে বলেছি। বুধবার (১০ মে) থেকে এসব পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।’
প্যানেল মেয়র হাসান মাহমুদ হাসনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রোধ করতে আর যেন বসতি গড়ে উঠতে না পারে, সে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাছাড়া পাহাড়ে যারা বসবাস করছেন, তাদের অনেকেরই ঘরবাড়ি নেই। তাই তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।’
M/H