নিজস্ব প্রতিবেদক:
নওগাঁ রাণীনগর উপজেলার চকমনু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রাণী সাহা’র স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের কারনে ৩ মাসের অধিক সময় ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান কার্যক্রম এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ভেঙ্গে পড়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সদস্য, সহকর্মী সহকারী শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্য ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন, ভাইসহ ভাড়াটিয়া লোকজন দ্বারা সহকর্মীদের হুমকী প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আনীত লিখিত অভিযোগের তদন্ত করার পরও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক ভুমিকা পালন করায় আরো বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে ওই প্রধান শিক্ষিকা। আগে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে কথা বলে অফিস টাইম পার করতো আর এখন ঠিকমত বিদ্যালয়েই আসেনা। ইচ্ছে মত বিদ্যালয়ে আসলেও কাজ আছে বলে ইচ্ছে মত চলে যান। তার কাছে স্থানীয় প্রশাসন অসহায়। এই প্রধান শিক্ষিকার খুঁটির জোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলে জানা গেছে। বর্তমানে ওই প্রধান শিক্ষিকার জন্য চকমনু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ও ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রধান শিক্ষক ক্লাসে প্রবেশ করে মোবাইল ফোনে কথা বলা শুরু করেন। আমরা কোন কিছু জিজ্ঞাসা কিংবা শিখে নিতে চাইলেই ফোনে কথা বলায় সমস্যা হওয়ার কারনে তিনি আমাদের ডাষ্টার, বেত দিয়ে মারপিট করেন। অনেক সময় কথা বলতে বলতে বাহিরে চলে যান। এভাবে তিনি বিদ্যালয়ে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি একটু নজর দেন না। আমরা খাতায় কোন কিছু ভুল করলেও তিনি দেখেন না। ফোনে কথা বলেন আর আমাদের ভুল হওয়া অংকে ও লেখার খাতায় সাইন দিয়ে দেন। সম্প্রতি ক্লাসে কথা বলার অপরাধে অপর ক্লাসের প্রতিটি শিক্ষার্থীদের ডাষ্টার দিয়ে তিনি চরম ভাবে মারপিট করেন।
স্থানীয় অভিভাবক কামিছুর রহমান, বলেন, এই প্রধান শিক্ষিকার এই রকম উগ্র আচার-আচরনের জন্য আমরা অনেক বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। হাজার অভিযোগের মাঝেও তিনি এই বিদ্যালয়ে আজো বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন কেমন করে এটা আমরা ভেবে পাই না। আজ আমরা বাধ্য হয়েই শুধুমাত্র এই মহিলার কারণে আমাদের সন্তানদের প্রাইভেট স্কুলে পড়াতে বাধ্য হচ্ছি। তাই বিদ্যালয়ে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই মহিলার কারণে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এই মহিলার বদলী ও অকারণে শিক্ষার্থীদের মারপিটের করার কারণে দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।
সহকারি শিক্ষকরা জানান, প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্নারাণী সাহা নিজের ইচ্ছে মতো বিদ্যালয়ে আসেন ও চলে যান। বিদ্যালয়ে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলেন। ফোন এলেই তিনি পাঠদানের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে ফোনে কথা বলেন। তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর পরই বিদ্যালয়ের অনেক বই ও খাতা বিক্রয় করেন। সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচার-আচরন করা তার নিত্যদিনের সঙ্গী। তার কাছে কোন কিছু শিখতে চাইলে এবং কারণে-অকারণে কমলমতি শিক্ষার্থীদের মারপিট করেন। তার এসব আচরনের কথা বললেই তিনি বিভিন্ন রকমের ভয়-ভীতি দেখান এবং খারাপ আচরন করেন। যার কারণে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু জানান, মহিলা খুবই প্রভাবশালী ও মিথ্যেবাদী। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে আসে ও যায়। কাউকে তোয়াক্কা করছেনা এই মহিলার কাছে বর্তমানে আমরাই জিম্মি হয়ে পড়েছি। এই মহিলার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সহকারি শিক্ষক ও অভিভাবকদের শত শত অভিযোগ। সে কারো কোন কথাই মানে না। তার অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণে সে আমার ও বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের নামে থানায় মিথ্যে একটি জিডিও দায়ের করে। আজ তার কারণে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠ পাঠদান পরিবশে ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা ব্যার্থ হওয়াই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বিষয়টি জানিয়েছি। প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রাণী সাহার কাছে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের (সাংবাদিকদের) সাথে কথা বলা প্রয়োজন বলে মনে করছি না। তাই আপনারা এখন আসতে পারেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মজনুর রহমান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। ওই প্রধান শিক্ষিকার আচরনে আমরাও সন্তষ্ট নই। তার পরও কিছু করতে পারছিনা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, স্বপ্না রানী সাহার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে পুনরায় বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবো। তিনিই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ