আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যেমনটা ভাবা হয়েছিল, সে দিকেই এক ধাপ এগোল মার্কিন প্রশাসন। রাশিয়ার উপরে নয়া নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে মঙ্গলবার বিল পাশ হয়ে গেল হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ। যদিও এই পদক্ষেপে মোটেই খুশি নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিরোধ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ইইউ-এর হুঁশিয়ারি, এই নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপের উপরে তেমন প্রভাব পড়বে না— দ্রুত এমন আশ্বাস না পেলে তারাও পাল্টা পদক্ষেপ করবে। আপাতত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস রুশ নিষেধাজ্ঞায় সায় দেওয়ায় এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা অনেকটাই খর্ব করার অস্ত্র পেয়ে গেল মার্কিন কংগ্রেস। বস্তুত কূটনীতিকদের মতে, এটা সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই চ্যালেঞ্জ করার সামিল।মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোটের হার ছিল ৪১৯-৩। এর পরে সেনেটে যাবে এই প্রস্তাব। রাশিয়া ছাড়াও এই বিল-এ ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার উপরেও নয়া নিষেধ চাপানোর কথা বলা হয়েছে। সেনেট এ বিষয়ে কবে ভোট দেবে, তা এখনও অস্পষ্ট। সেনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান বব কর্কার সোমবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই বিলটিতে কিছু পরিবর্তন ঘটানো হতে পারে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এতে সই করবেন কিনা, সেটাই এখন জল্পনার বিষয়। হোয়াইট হাউসের মিডিয়া সচিব সারা স্যান্ডার্সের যেমন দাবি, প্রেসিডেন্ট এই নয়া বিল-এ সায় দেবেন। কিন্তু জনসংযোগ অধিকর্তা অ্যান্টনি স্কারামুচির বক্তব্য, এতে প্রেসিডেন্টের পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন। নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রথম থেকেই সুর চড়া ছিল রাশিয়ার। মঙ্গলবারের ভোটাভুটির পরে ক্রেমলিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের দাবি, দু’দেশের সম্পর্ক এমনিও খুব একটা ‘ভাল’ জায়গায় নেই। নয়া নিষেধাজ্ঞা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও খারাপ করবে। ইইউ-এর আশঙ্কা, রাশিয়া থেকে জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিতর্কিত পাইপলাইন ‘নর্ড স্ট্রিম ২’-এর বিনিয়োগে যে সব সংস্থা যুক্ত, তাদের উপরে প্রভাব পড়বে এই নিষেধাজ্ঞায়। ইইউ-এর প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জুঙ্কার বলছেন, সরাসরি না চাইলেও এই বিল ইইউ-এর শক্তি নীতিকে প্রভাবিত করবে। তাই তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘এই সব উদ্বেগ মাথায় রাখা না হলে কিছু দিনের মধ্যেই যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে ইউরোপের স্বার্থ সবার শেষে দেখা হবে, তা তো হয় না।’’ মিত্র দেশগুলির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এগোনো উচিত ছিল বলে জুঙ্কারের দাবি। যেমন হয়েছিল ২০১৪ সালে। যখন ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নিয়েছিল রাশিয়া, তখন ইইউ এবং আমেরিকা মিলিত ভাবে নিষেধ চাপিয়েছিল পুতিনের দেশের উপরে।
এ বার নিষেধাজ্ঞা নিয়ে হাউস এত তৎপর কেন? প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে ট্রাম্পের অন্যতম পরামর্শদাতা এবং জামাই জ্যারেড কুশনারকে সম্প্রতি হাউসের গোয়েন্দা কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার কিছু ঘণ্টা পরেই নয়া নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবা হয় বলে প্রশাসন সূত্রে দাবি।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ