নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)-এ প্রায় ২ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় এবং দেশে চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার সুবাদে অবশেষে গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দর। এর আগে কয়েক বছর থেকে রাজস্ব আদায়ে নির্ধরিত লক্ষ্যমাত্রার কাছেই ভিড়তে পারেনি দেশের এই স্থল বন্দরটি। হিলি স্থল বন্দর সূত্রে জানাগেছে, টানা কয়েক বছর রাজস্ব আদায়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারছে না এই বন্দরটি। সূত্রমতে গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে হিলি স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু রাজস্ব আদায় হয় মাত্র ৩০ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় হয় ৭০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। কিন্তু গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। তাছাড়া এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বেধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার তিনগুণেরও বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর এর সিংহভাগ অর্থই আদায় হয়েছে পাথর আমদানি থেকে। বাকী রাজস্ব আদায় হয়েছে চাল ও ফল আমদানিসহ অন্যান্য খাত থেকে। হিলি ল্যান্ড কাস্টম্স-এর সহকারী কমিশনার মো. ফখরুল আমীন চৌধুরী জানান, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে হিলি স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে মোট ১০ লাখ ১৩ হাজার ৪৩ মেট্টিক টন পাথর আমদানি হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮০ কোটি ৩৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। চাল আমদানি হয়েছে ৬৯ হাজার ৪০৩ মেট্রিক টন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৫ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। বিভিন্ন ফল আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ৪৩ মেট্টিক টন। এতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ ১ হাজার টাকা। বাকী ৪০ কোটি ৬০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে বিভিন্ন মালামাল আমদানি ও ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপারের ক্ষেত্রে। তিনি জানান, এই বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারে আন্তর্জাতিক সুবিধা নিশ্চিত করন, স্ক্যানিং মেশিন, যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সুবিধাদি নিশ্চিত করতে পারলে এই বন্দরের রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে। এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর পরই বন্ধ হয়ে যায় দেশের একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের পাথর উত্তোলন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় ২ বছরেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনে যেতে পারেনি এই পাথর খনিটি। জিটিসি ১৭১.৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ৬ বছরে ৯২ লাখ টন পাথর উত্তোলন করে দেয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়। জিটিসি ৬ মাসের মধ্যেই দৈনিক উৎপাদন ৫’শ টন থেকে সাড়ে ৫ হাজার টনে উন্নীত করে। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা পাথর উত্তোলন করে ১১ লাখ ৯২ হাজার টন পাথর। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড মাইনিং ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইকুইপমেন্টের অভাবে ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় জিটিসি। পরে খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার হস্তক্ষেপে গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি টাকার মাইনিং ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয় খনি কর্তৃপক্ষ। জিটিসি’র অনুকূলে খোলা হয় ৩৬টি এলসি। ইতিমধ্যেই এসব ইকুইপমেন্ট খনিতে এসে পৌঁছেছে এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত নতুন ও আধুনিক এসব ইকুইপমেন্ট ইতিমধ্যেই খনির ভূ-অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়েছে। অচিরেই মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড আবারও বাণিজ্যিকভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করবে বলে জানিয়েছে খনির একটি সূত্র। এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মাহমুদ খান বুধবার জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি চলতি মাসের ২৫ জুলাই থেকে বাণিজ্যিকভাবে পাথর উত্তোলন শুরু করবে বলে তাকে পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছিল। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকার পরও কি কারণে তারা উৎপাদন শুরু করেনি, এখনও তাকে জানায়নি। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং অচিরেই বাণিজ্যিকভাবে পাথর উৎপাদনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান। প্রায় ২ বছর পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় দেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং দেশের পাথরের চাহিদা মেটাতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় ভারত থেকে পাথর উত্তোলন। এতে দেশীয় মুদ্রা অপচয় হলেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দরের।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ