২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৫৬

সাতক্ষীরা ছাত্রলীগে অধিকাংশ বিবাহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিবাহিত নেতাদের পদ ছাড়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামে সাড়া দেননি সাতক্ষীরা ছাত্রলীগের বিবাহিত নেতারা। জেলা ছাত্রলীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা বিবাহিত হলেও পদত্যাগ করেছেন মাত্র একজন।

সংগঠনের অনেকের ছাত্রজীবন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেলেও পদ ধরে রেখেছেন তারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আছে সংগঠনের তরুণ নেতাকর্মীদের মধ্যে। আলটিমেটামের মধ্যে যে একজন পদত্যাগ করেছেন, তিনি হলেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন।

জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিবাহিতদের দিয়ে চলছে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলার ছাত্রলীগের কার্যক্রম। এ কারণে সাতক্ষীরা ছাত্রলীগ কয়েক ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কারো কারো অভিযোগ, প্রকৃত ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন নেত্বত্ব থেকে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বরে এস এম মারুফ তানভীর হুসাইন সুজনকে সভাপতি ও এহসান হাবীব অয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে নয়জনের একটি আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ১ বছর পর ৬১ সদস্যবিশিষ্ট এক বছরের মেয়াদি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এক বছরের ওই কমিটি বর্তমানে সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পার করছে।

তৃণমূলের অভিযোগ, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পদধারী বেশির ভাগ নেতা সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, অছাত্র ও বিবাহিত। তারা সার্বক্ষণিক নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংগঠন। এতে করে ভেঙে পড়েছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, বর্তমানে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির ভোমরা স্থলবন্দরে মেসার্স জেবা এন্টারপ্রাইজ নামের ভোমরা কাস্টমস্ সিঅ্যান্ডএফের এজেন্ট ব্যবসা রয়েছে। এই ব্যবসা নিয়ে তিনি সব সময় ব্যস্ত থাকেন। তিনি জেলা যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতার মেয়েকে বিয়ে করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দেয়া তথ্যমতে, সাড়ে চার বছর ধরে চলা বর্তমান কমিটির অনেকের ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান জেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা বিবাহিত জীবন যাপন করছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন, সহসভাপতি নাছিম হায়দার রিপন, সহসভাপতি জাহিদ হাসান, সাইফুল আযম জিমি, মারুফ হাসান রিঙ্কু, খন্দকার আওরঙ্গজেব নয়ন। এই দলে আছেন সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের রাজু।

জেলার সাত উপজেলার মধ্যে চার উপজেলার সভাপতিই বিবাহিত। তাদের সবার বয়স ২৯ বছরের ওপর। তারা সন্তানের জনক ও ব্যবসায়ী।
তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সরদার মশিয়ার, আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির সুমন, দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাজিরসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন। তবে কেন্দ্রীয় ঘোষণার পর অনেকে বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাছিম হায়দার রিপন একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে কর্মজীবনে গিয়ে বিবাহিত হলেও রয়ে গেছেন ছাত্রলীগে।
মিঠুন ব্যানার্জির ছাত্রজীবন শেষ হলেও ছাত্রসংগঠন করার জন্য তিনি আবার ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে আবু তাহের রাজুকে ২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করার দায়ে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাছিম হায়দার রিপনের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি সাড়া দেননি।
আরেক সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন অবশ্য আলটিমেটামের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পরই আমি নিজে থেকে পদত্যাগ করেছি।’

কমিটিতে বিবাহিত থাকা ও কেন্দ্রের আলটিমেটামের পর কেমন সাড়া পেয়েছেন জানতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবীব অয়নের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথমে ফোন ধরে বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি।’ পরে একাধিকবার তার ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগ করলেও তিনি আর ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালে তার কোনো  উত্তর পাওয়া যায়নি।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন দাবি করছেন কেন্দ্রের আলটিমেটামের পর অনেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যারা বিবাহিত তাদের আমি পদত্যাগ করতে বলেছি। প্রমাণসহ বিবাহিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ নিজের বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর বলেন, ‘আমি বিবাহিত কি না আপনারা তদন্ত করে দেখতে পারেন।’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :জুলাই ২২, ২০১৭ ১২:২১ অপরাহ্ণ