উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সীমান্ত উপজেলায় রোহিঙ্গারা ভোটার হতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এসব দৃশ্য এখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সচরাচর চোখে পড়ছে। গত কয়দিন ধরে ভোটার হতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কথিত নেতা নামধারী ব্যক্তিদের নিকট ধর্ণা দিতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ চলছে রোহিঙ্গাদের। মোটা টাকার টার্গেট নিয়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হতে আগেভাগেই মাঠে রোহিঙ্গা। ইসির ঘোষণা মতে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ৩০টি উপজেলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব এলাকায় ভোটার হতে হলে ভোটার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে তার বাবা-মা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
গত সোমবার (১৭ জুলাই) দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয় সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। ২৫ জুলাই থেকে ভোটার হালনাগাদ করার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এ খবর অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্টনিক মিডিয়ায় প্রচার হওয়ায় তৎপর হয়ে ওঠে রোহিঙ্গাদের একটি চক্র। রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নানা কায়দা কৌশলে এগোচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে মোটা টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে রোহিঙ্গারা। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা স্থানীয় কিছু দুর্লোভি জনপ্রতিনিধির শরনাপন্ন হচ্ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ভোটার প্রবন উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে আশংকায় থাকা কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, সদরের ঈদগাও, রামু, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, চট্রগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, বাশঁখালী, রাংগুনিয়া, কাপ্তাই, ফটিকছড়ি, আনোয়ারা, রুমা, থানচি বান্দরবানের আশপাশের এলাকায় রোহিঙ্গা বসতি উল্লেখযোগ্য। ইতিপূর্বে শত –সহস্রাধিক রোহিঙ্গা পরিবার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বেশী পরিবার ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া উপজেলার মধ্যে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, সদরের ঈদগাও, রামু, মহেশখালী, চকরিয়া ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া উল্লেখযোগ্য। তৎমধ্যে কক্সবাজারের উখিয়া -টেকনাফে রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির, বস্তি কেন্দ্রীক রোহিঙ্গারা ইতিপূর্বে বহু পরিবার স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে শহরে) গ্রামে বসতি স্থায়ীত্ব করেছে। অনেক রোহিঙ্গা এদেশে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আত্মীয়তার সম্পর্কে ভোটার হওয়ার জন্য তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিধি ও নেতৃত্বশীল ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়ে চুক্তিবদ্ধ ভাবে ভোটার হওয়ার জন্য আগাম তোড়জোড় শুরু করেছে। ওইসব রোহিঙ্গা পরিবারের রয়েছে শরনার্থী শিবির, মিয়ানমারেও একাধিক বাড়ি। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা বৃদ্ধির তথ্য জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘এর আগে ২০টি উপজেলা ছিল বিশেষ এলাকা। এবার আরও ১০টি এলাকা চিহ্নিত করেছি। এই ৩০টি এলাকার জন্য বিশেষ কমিটি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা রোধে এসব বিশেষ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে নতুন করে কোন ১০টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সচিব তা উল্লেখ করেননি। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়ে সচিব বলেন,‘বিশেষ এলাকার যে কার্য পরিধি আছে, সেখানে কমিটির কাজ নির্ধারিত করা আছে। বিদেশি নাগরিকরা যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারেন, সে বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিতে পারবেন। বিশেষ এলাকায় ভোটার হতে চাইলে কমিটি ভোটারের বাবা-মায়ের আইডি দেখবে, ফুফু-চাচার আইডি দেখবে। এসব না থাকলে বা বিদেশি নাগরিক প্রমাণ পেলে কোনও লোক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। ২৫ জুলাই থেকে ৯ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার হালনাগাদ কাজ শুরু হবে। যাদের বয়স ১ জানুয়ারি ২০০০ বা তার আগে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, এবার তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহের পর তিনটি ধাপে ডিসেম্বরের মধ্যে নাগরিকদের ছবি ও তথ্য নিবন্ধন করা হবে। ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। হালনাগাদে ঠিকানা স্থানান্তর ও মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হবে। তবে তথ্য হালনাগাদে নাম সংশোধনের বিষয়টি রাখা হয়নি। নাম বা অন্য যেকোনও সংশোধনের জন্য যেকোনও দিন নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। আর এটা সারা বছরই করা যাবে। তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনের জন্য সাত পর্যায়ে সাত ধরনের কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি, বিভাগীয় কমিটি, জেলা, উপজেলা, বিশেষ এলাকার জন্য আদালা কমিটি, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য কমিটি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার জন্য কমিটি আছে। এবারের ভোটার তালিকায় বাদ পড়া ৩৫ লাখ ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। সারা বছরই যে কাউকে নতুন করে ভোটার তালিকাভুক্ত করা যাবে। এছাড়া যে কেউ সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন, সংযোজন-বিয়োজন করতে পারবেন। কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে যেকোও সময় উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসে আবেদন করতে পারবেন। নারী ভোটার বাড়ানোর বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘নারী ভোটার বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী এবং সচিবের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। এছাড়া নারী নেতৃত্বে যারা আছেন, বিশেষ করে নারী জনপ্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীদের কাছে এই কার্যক্রমে আমরা সহযোগিতা চেয়েছি।’ সভায় সকল বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়ে এলাকাবাসীরা বলেন যেকোন মুল্যে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্ত ঠেকাতে হবে। সেই সাথে যারা রোহিঙ্গাদের আত্মীয় পরিচয়ে ভোটার তালিকাভুক্ত করণে সহযোগিতায় লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ভোটার হালনাগাদ কালে পুর্বে যেসব রোহিঙ্গা পরিবার ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে, তাদের বাদ দেওয়ার দাবী জোরালো হচ্ছে। পালংখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা এমনিতে আমার আপদ, তাদেরকে ভোটার করা মানে আমরা অভিশাপে নিক্ষিপ্ত হওয়া। রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পেরে সে বিষয়ে চোখ কান খোলা রেখে সজাগ আছি। কুতুপালং গ্রামের ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হলেও আমার সাদ্যমত রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আমি নিজেই সজাগ আছি। জালিয়াপালং ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, আমার এলাকাটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত হলেও প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদেরকে রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, কোনমতেই রোহিঙ্গারা ভোটার হতে পারবে না। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের বিষয়টি জোরালো ভাবে উত্থাপন করা হবে।
দৈনিক দেশজনতা/ এন আর