আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত ২০ জুন হঠাৎ করেই সৌদি আরবের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মোহাম্মদ বিন নায়েফ ক্রাউন প্রিন্স থেকে সরে দাঁড়ালেন। তার স্থলে বাদশা সালমনান তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স করলেন। ঠিক কী কারণে ক্রাউন প্রিন্স থেকে ভাতিজা নায়েফকে বাদশা সালমান অপসারণ করেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক গল্প বের হয়েছে।
সৌদি আরবের নিরাপত্তা কাঠামোর দুই দশকের সবচেয়ে প্রভাবশালী লোকটির এই আলো থেকে পলায়ন ভাবনার খোরাক দিয়েছিল পর্যবেক্ষকদের। অবশেষে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ক্রাউন প্রিন্স থেকে নায়েফের সরে দাঁড়ানোর নেপথ্যের কাহিনী।
এতে বলা হয়েছে, ২০ জুন সৌদি রাজপ্রাসাদে কী ঘটেছিল, সেটা বেশ চাঞ্চল্যকর। সেদিন নাকি মক্কার রাজকীয় প্রাসাদে বাদশাহ সালমানের কাছে ডেকে পাঠানো হয়েছিল মোহাম্মদ বিন নায়েফকে।
রাজপ্রাসাদ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাদশাহ সালমান তার ভাতিজা নায়েফকে প্রাসাদে ডেকে এনে পদত্যাগ করতে বলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত নিজের উত্তরাধিকার হিসেবে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের পথ পরিষ্কার করেন।
রাজপ্রাসাদের সূত্র জানায়, সৌদি বাদশা নায়েফের সঙ্গে একটি কক্ষে একান্তে বৈঠকে বসেন। এ সময় তিনি নায়েফকে বলেন, ‘আমি চাই তুমি পদত্যাগ কর। বলেছিলাম মাদকাসক্তির চিকিৎসা নাও কিন্তু তুমি শোনোনি। তোমার মাদকাসক্তি এই সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে প্রভাবিত করছে’।
বিশ্লেষকদের মতে, বাদশার এই একটি সিদ্ধান্ত সৌদি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের গতিবিধি বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক সৌদি আরব রাষ্ট্রের ভেতরকার কাঠামোতেও বড় রদবদল হলো। এদিকে নায়েফ আসলেই মাদকাসক্ত ছিলেন কিনা অনুসন্ধান করেও রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি। সৌদি সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রিন্স নায়েফের মাদকাসক্ত-সংক্রান্ত বক্তব্যটি ভিত্তিহীন ও অসত্য। এ গল্পটি হলিউডের ফ্যান্টাসি সিনেমার যোগ্য।’
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের চাপ বা অসম্মানের কারণে তিনি (মোহাম্মদ বিন নায়েফ) পদত্যাগ করেননি। তাকে অপসারণ একটি কনফিডেন্শিয়াল বিষয়।’
সৌদি রাজপ্রাসাদের ঘটনা যারা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন, তেমন একটি সূত্রের মতে, রাজ সিংহাসনে নিজ ছেলেকে উত্তরাধিকার করার জন্যই বাদশা সালমান তার ভাতিজি নায়েফকে সরিয়ে দিয়েছেন। মাদকের অভিযোগ একটি ছুঁতামাত্র।
রয়টার্স রাজপ্রাসাদের জ্যেষ্ঠ তিন ব্যক্তি, সরকারি চার কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, পদত্যাগের নির্দেশনা পেয়ে নায়েফ খুবই অবাক হয়েছিলেন।
সূত্রের মতে, ‘এটা মোহাম্মদ বিন নায়েফের জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ ছিল। এটা ছিল একটা প্রাসাদ ক্যু এবং নায়েফ এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।’ নায়েফের খুব ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে জানা যায়, আবেগী মোহাম্মদ বিন সালমান তার জায়গায় বসবে এটা প্রত্যাশা করেননি নায়েফ।
বাদশাহ সালমানের প্রিয় ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ভুল করেছেন। বিশেষ করে ইয়েমেন সংকট মোকাবিলা ও সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক সুবিধাদি কমিয়ে সমালোচনার শিকার হয়েছেন। সব মিলে এটা স্পষ্ট, মাত্র ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স করার জন্যই ভাতিজা নায়েফকে এভাবে ষড়যন্ত্র করে সরিয়ে দেন বাদশা সালমান।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ