নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্বাচনকে সামনে রেখে মসজিদ ও মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনা উন্নয়নে প্রত্যেক সংসদ সদস্য ২ কোটি করে টাকা পাচ্ছেন। এজন্য আলাদা করে প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭৭ কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে এসেছে। শিগগিরই এ প্রকল্প অনুমোদন হতে পারে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এক প্রকল্পের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এ অর্থ দিয়ে প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ নিজ এলাকার কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, মন্দির, চার্চ, গির্জা, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা, ঈদগাহ, খেলার মাঠসহ সার্বজনীন অবকাঠামো উন্নয়ন করবেন।
কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবের ওপর শিগগিরই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) একটি বৈঠক হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হবে। সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঈদগাহ, মসজিদ, মন্দিরসহ সাবর্জনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রতিটি উপজেলায় এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হবে। কোনো নির্দিষ্ট সংসদীয় আসনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে না। দেয়া হবে প্রতিটি উপজেলায়। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধর্মীয় অনুশাসন, মূল্যবোধ, নৈতিকতাসহ মানবিক ও শারীরিক বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। তাই ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতিসহ উন্নত সমাজ গঠনে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে প্রকল্পটি নিয়ে আপত্তি আছে পরিকল্পনা কমিশনের। কমিশনের যুক্তি হলো, দেশের কোনো কোনো আসনে উপজেলা আছে সাতটি। তাহলে প্রতিটি উপজেলায় এক কোটি টাকা করে বরাদ্দ দিলে ওই আসনের এমপি বরাদ্দ পাবেন সাত কোটি টাকা। আবার কোথাও কোথাও দুই উপজেলা মিলে একটি আসন আছে। তাহলে ওই আসনের এমপি পাবেন দুই কোটি টাকা করে। এতে সংসদ সদস্যদের মধ্যে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিভাজন তৈরি হবে। বরাদ্দ কম পাওয়া এমপিরা ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তাই সবাই যাতে সমানভাবে বরাদ্দ পান, সেজন্য আসনভিত্তিক বরাদ্দের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৭ জুলাই একনেক সভায় ছয় হাজার ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় একজন এমপি তার নিজ আসনের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতি বছর চার কোটি টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ২০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা। ওই প্রকল্পের আওতায় এমপিরা চাহিদা মতো এলজিইডির কাছে তাদের এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা দেন। এলজিইডি এমপিদের দেয়া তালিকা ধরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এমপিদের দাবি ছিল, ‘অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শিরোনাম প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন করতে।
কিন্তু ওই প্রকল্পে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য কোনো স্কিম বা কম্পোনেন্ট ছিল না। সম্প্রতি এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এলজিইডি থেকে এমপিদের প্রস্তাবে আপত্তি জানানো হয়। এলজিইডি থেকে বলা হয়, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন করতে চাইলে আলাদা প্রকল্প নিতে হবে। সে আলোকেই আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকা জোগান দেয়ার কথা রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, এ ধরনের প্রকল্পের নামে মূলত জনগণের করের টাকাই লোপাট করা হয়। কারণ এ ধরনের প্রকল্পে বড় বড় প্রকল্পের মতো উন্মুক্ত দরপত্র বা ওটিএম সাধারণত আহ্বান করা হয় না। ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার কাজে কোটেশন আহ্বান করে প্রত্যেক এমপি তার নিজ নিজ পছন্দের ব্যক্তিকে দিয়ে কাজগুলো করাবেন। নির্বাচনের আগে এ ধরনের কাজের সুযোগও দেয়া হয় অনভিজ্ঞ ঠিকাদারদের। এই বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে একই ধরনের প্রকল্প এখন চলমান। তাই নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন স্ববিরোধিতারই শামিল।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ