নিজস্ব প্রতিবেদক:
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মিলে কমিশনের কর্মকর্তা বদলি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কমিশনকে সম্পূর্ণভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে একজন কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত কমিটিকেও সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে এটি আইন ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আজ শনিবার সংগঠনটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যা নাগরিকের স্বার্থে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে। এজন্য কমিশনকে অগাধ ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আলতাফ হোসেন বনাম আবুল কাসেম মামলায় [৪৫ ডিএলআর (এডি) (১৯৯৩)] সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেন যে, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন আইনি বিধানের সাথে সংযোজনও করতে পারেন’।
বিরাজমান আইনানুযায়ী, নির্বাচন কমিশন একটি যৌথ সত্তা। কমিশনের পাঁচজন সদস্য তাদেরকে প্রদত্ত ক্ষমতা যৌথভাবে প্রয়োগ করবেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ এর ধারা ৪ অনুযায়ী, ‘কমিশন উহার চেয়ারম্যান বা উহার কোন কর্মকর্তাকে এই আদেশের অধীন উহার সকল বা যে কোন কর্তব্য বা দায়িত্ব পালন করিবার জন্য ক্ষমতা অর্পণ করিতে পারিবে’।
অর্থাৎ পুরো কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দায়িত্ব না দিলে তিনি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না [জাতীয় পার্টি বনাম ইলেকশন কমিশন, ৫৩ ডিএলআর (এডি) (২০০১)]।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এটি সুস্পষ্ট যে, আইন ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনকে কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বদলিসহ সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কমিশনের সদস্যদের যৌথ সিদ্ধান্তে নিতে হবে। কারণ নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি কমিশনের নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্বের সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট। এর ব্যত্যয় ঘটলে কমিশন নিজেই আইন ভঙ্গ করবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ বিষয়টি আমলে নিবেন। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা প্রদর্শন করা আরো বেশি জরুরি। আমরা আশা করি যে, কমিশন বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নেবে।