২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:২৪

বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে বন্যা দুর্গতরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও তিস্তা নদীতে ভারতের গজল ডোবা ব্যারেজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ছাড়াও কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। যমুনার করাল গ্রাসে অনেকে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। যমুনার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। পানিবন্দী মানুষগুলো অসহায়দের মধ্যে জীবনযাপন করছে। বন্যা কবলিতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকার থেকে যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৭ দিনের কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় প্রায় ৫শতাধিক ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যা কবলিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার মিল্ক ভিটার খামারীরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় রাস্তা ঘাট থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়াতে রাস্তাঘাটের বিপর্যয় হয়েছে। জেলার ৪৮ কিলোমিটার বাঁধে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সিরাজগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ১৯৪টি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪ হাজার ৮১৬ পরিবার ও ৬১ হাজার ১৮৬ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের মাঝে ৮৪ মে. টন চাল ও ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

শাহজাদপুর কৈজুরী ইউপির হাটপাচিল গ্রামের বুলবুলি বেগম, সোলেমান ও সাইদুল জানান, সকালে বসতবাড়ী ঠিকই ছিল। কিন্তু রাতে যমুনার ভাঙনে অধিকাংশ চলে যায়। ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ওঠে ছেলে মেয়েকে নিয়ে যা পেরেছি তা সরিয়ে নিয়েছি। একই গ্রামের জলিল ও হানিফ জানান, নদীতীরে বসতভিটা যেভাবে ভাঙ্গছে কখন যে সবকিছু নদী গ্রাস করে নেয় এমন আতঙ্কে সব সময় থাকতে হচ্ছে।

ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ জানান, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রায় ৫ শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ব্যবস্থা নেয়া তো দুরের কথা পাউবো খোঁজ নিতেও আসেনি।

শাহজাদপুরের কৈজুরী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙনের বিষয়টি পাউবো ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুধু আশ্বাসই দিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই করছে না।

জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ মজুদ রয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত পরিবারের মাঝে ৮৪ মে. টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশালী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়ায় জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাউবো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা জানান, বন্যা কবলিতদের মধ্যে ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্যা কবলিত পাঁচটি উপজেলায় উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ৫ কেজি চাউল, ১ কেজি চিড়া, ১কেজি লবন, ১ কেজি চিনি, ডাল দিয়াশলাই, মোমবাতি ও মুড়িসহ ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপজেলাওয়ারী দায়িত্ব বন্টন করে দেয়া হয়েছে। তারা সার্বক্ষনিক বন্যা কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। বন্যায় যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয় এবং বন্যা মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুলাই ১২, ২০১৭ ৪:০১ অপরাহ্ণ