২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:২২

সুন্দরবন সুরক্ষায় বাংলাদেশের দায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেল: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

পোলান্ডের ক্রাকো শহরে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির চলমান ৪১তম অধিবেশনে বাংলাদেশের সুন্দরবন ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণের সম্ভাবনা থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি পাওয়াকে আপাত স্বস্তিদায়ক আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এই সাময়িক স্বস্তিমূলক অব্যাহতি পাওয়ার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের কূটনৈতিক তৎপরতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য সূত্রে জানা যায়।

একইসাথে, এই সাময়িক স্বস্তি রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারত সরকারের ওপর সুন্দরবনের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষা নিশ্চিতের চ্যালেঞ্জ ও দায় বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে বলে মনে করছে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির পরবর্তী ৪২তম সভার মধ্যে সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণে অর্পিত শর্তাবলী পালনে ব্যর্থ হলে সুন্দরবনকে পুনরায় ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করার ঝুঁকি অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তিনি।

বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত কর্তৃপক্ষের কতিপয় সাম্প্রতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সেই সাথে টিআইবি আরো লক্ষ করছে যে, কমিটি বাংলাদেশ ও ভারতকে মার্চ ২০১৬ এর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার) মিশন প্রসূত প্রতিটি সুপারিশসহ কতিপয় সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ সুপারিশ অত্যন্ত জোরালোভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লিখিত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কমিটির ৪১তম সভার প্রতিবেদনের ৫৫ থেকে ৫৮ পৃষ্ঠার তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবন ও তার আশেপাশে বিশেষকরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর “কৌশলগত পরিবেশ প্রভাব সমীক্ষা” সম্পন্ন করতে হবে এবং তার আগে ঐ এলাকায় রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সকল প্রকার শিল্প কারখানার কার্যক্রম স্থগিত করতে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি আহ্বান জানিয়েছে। একইভাবে, সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পশুর নদের খননের আগে তার পরিবেশগত প্রভাব ও সুন্দরবনের পরিবেশগত পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন প্রণয়নসহ মার্চ ২০১৬ এর মিশন উপস্থাপিত সুপারিশসমূহ কতটুকু বাস্তবায়ন করা হয়েছে তার প্রতিবেদন ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি’র মধ্যে ইউনেস্কোর নিকট দিতে হবে।

একইসাথে, সুন্দরবন সুরক্ষায় বাংলাদেশের সাথে ভারতের সহযোগিতার অধিকতর সম্প্রসারণের অপরিহার্যতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে কমিটি ইউনেস্কোর ২০১৬ এর মার্চ মিশনের সকল সুপারিশ অতীব জরুরী ভিত্তিতে পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বোপরি কমিটি সুন্দরবনের উপর প্রস্তাবিত রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের গুরুত্বের নেতিবাচক পরিবেশগত, প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যজনিত প্রভাব, বিশেষ করে বায়ু ও পানি দূষণ, শিপিং, ড্রেজিং ও পানি অপসারণ জনিত লবণাক্ততাসহ বৈজ্ঞানিক তথ্য ও বিশ্লেষণ ভিত্তিক ইউনেস্কোর বিদ্যমান উদ্বেগ নিরসনের নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রমাণের অনুপস্থিতিতে উল্লিখিত কৌশলগত পরিবেশ প্রভাব সমীক্ষায় এ ধরনের সম্ভাব্য সকল প্রভাবের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।

এছাড়া, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আইইউসিএন এর বিশ্ব ঐতিহ্য পরামর্শমালা অনুসরণ করা ও রামপাল প্রকল্পের বর্তমান অবস্থানে সকল সম্প্রসারণ কার্যক্রম বন্ধ করার যে সুপারিশ করেছে তার প্রতি টিআইবি রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :জুলাই ৭, ২০১৭ ৮:৫১ অপরাহ্ণ