নিজস্ব প্রতিবেদক:
শখের বশে নারকেলের আইচা (খোসা) দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের কাজ শিখেছিলেন বরিশাল নগরীর রূপাতলীর আনোয়ার হোসেন মন্টু। নগরীর নূরিয়া স্কুল এলাকার শৌখিন মানুষ মীর আনিসউদ্দিন আহম্মেদের কাছ থেকে আগ্রহের সঙ্গেই এ কারুকাজ রপ্ত করেন তিনি। পরের বছর আইচা দিয়ে পরীক্ষামূলক কয়েকটি শোপিস তৈরি করলেন। এর মধ্যে ছিল টেবিল লাইট, নৌকা, পাউডার কেস, জুয়েলারি কেস, শাপলা ফুল, বেল্ট প্রভৃতি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র ৩০ টাকায় কেনা যন্ত্রপাতি দিয়ে আইচার বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরির কাজ শুরু করেন মন্টু।
১৯৭২ সালে বাণিজ্যিকভাবে আইচা দিয়ে শোপিস তৈরির কাজ শুরু করেন। এখন তার কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের দুই শতাধিক শোপিসের মূল ক্রেতা ঢাকার আড়ং। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও তার উৎপাদিত পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। আইচা নিয়ে গবেষণার জন্য একটি ইনস্টিটিউশন ও একটি কারুপল্লি প্রতিষ্ঠা করা আনোয়ার হোসেন মন্টুর জীবনের শেষ স্বপ্ন। বরিশাল নগরীর রূপাতলী শেরেবাংলা সড়কে এখন দুটি কারখানা তার। হস্তশিল্পের আয় দিয়েই নিজের কাঁচাঘরের স্থলে চারতলা পাকা ভবন করেছেন। তার দুটি কারখানায় কাজ করছেন স্বামীপরিত্যক্তা ১৮ জন নারী এবং সুবিধাবঞ্চিত কয়েকজন শিশু-কিশোর। কারুশিল্পী রোজিনা আক্তার বলেন, বাইরে রোদ-বৃষ্টিতে কাজ করতে হয়। আর কারুকাজ ঘরের মধ্যে বসেই করা যায়। কারুকাজ করে যে আয় হয়, তা দিয়ে তার ভালোভাবেই চলে যায়। মিনু বেগম নামে আরেক কারুশিল্পী বলেন, ১০ বছর ধরে ঘরে বসে কারুকাজ করছেন তিনি। এখন তিনি অনেক ধরনের শোপিস তৈরি করতে পারেন। মন্টুর কারখানার আয় দিয়ে সংসার ও সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালান তিনি। শুধু নারকেলের আইচা নয়, বাজার সম্প্রসারণ করতে কাঠের নানা কারুকাজও সংযুক্ত করেছেন মন্টু। এনেছেন আধুনিকতা। দামি মেশিন দিয়ে তৈরি শোপিসগুলোর চাহিদাও বেশ। মায়ের নামে মন্টু প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘হাসিনা কুটির শিল্প’।
এর কম্পিউটার ডিজাইনার বেলাল হোসাইন জানান, প্রতিযোগিতার বাজারে কারুকাজে এসেছে মেশিনারিজের ব্যবহার। এর সফলতাও আসছে। শূন্য থেকে শুরু করে কারুকাজ দিয়েই পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন মন্টু। এখন বিদায়বেলায় সমাজের জন্য কিছু করার স্বপ্ন তার।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ