নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার একমাত্র নারী রিকশাচালক সুমি বেগম। অলিগলি পেরিয়ে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছেন গন্তব্যে। লিঙ্গভিত্তিক প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন কঠিন প্রতিজ্ঞায় আর রিকশার তিন চাকায়। মূলত নিজের মেয়েটাকে বড় করতেই এ পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। সত্যিকার অর্থেই এক কঠিন মনের নারী তিনি। না হলে এমন বিরাট চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন কেউ?
অন্য রিকশাওয়ালারা যেভাবে চলেন, তার বেশভূষাও তেমনই। নিজেই বললেন, আমার ওদের মতো ছেলে বেশেই চলতে হইব। ‘ শার্ট পরেন, প্যান্ট বা লুঙ্গিও পরতে হয়। গলায় গামছা। বাংলার রিকশাচালকদের চিরাচরিত রূপে রাস্তায় নামেন সুমি।
কি সকাল কি রাত, রিকশা চালান তিনি। এর ওর সঙ্গে মাঝে মাঝে বিতণ্ডা লেগে যায়। ‘ওই মিয়া’ বলে ধমক দিতেও পিছপা হন না। কঠিন দুনিয়ায় কঠিনভাবেই তো টিকে থাকতে হবে। অন্য রিকশাচালকরা প্রশ্নও করে যে তিনি ছেলেদের কাজ কেন করছেন? জবাব দিতেও কার্পণ্য নেই সুমির। ‘জামাই নিশা করত, তাই ডিভোর্স দিয়া চলে আসছি’, এমন জীবন বেছে নেওয়ার কারণটা স্পষ্ট। তখন তিনি তিন মাসের গর্ভবতী ছিলেন।
‘আমার মতো অনেক মেয়ে আছে যারা বাদ হয়ে গেছে। আমি চিন্তা করি কি, আমি যদি এমন হই তো আমার মেয়েটাও বাদ হয়ে যাইব…’, জীবনের গল্পগুলো বলতে থাকেন তিনি। বাংলাদেশে এখনও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অন্যতম বাহন রিকশা। বিশেষ করে ঢাকা তো রিকশার রাজধানী। ঢাকা মোটামুটি ৮ লাখ রিকশার শহর। প্রতিদিন ৭ লাখ রিকশায় চলাফেরা করে এ শহরে। এগুলোর মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ চলাফেরা করছে। এটি লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ড রেলের দ্বিগুণ সেবা দিচ্ছে বলে মনে করা হয়।
বিষয়টি হলো, রিকশা চালান পুরুষরা। এতে অনেক শক্তি আর পরিশ্রম ঢালতে হয়। পুরুষরাই রিকশা চালাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই প্রথম সুমি রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাস্তায়।
আশপাশের মানুষ অবাক হয়ে এই সংগ্রামী নারীকে দেখেন। কেউ কটু কথা বলেন। কারো চোখে থাকে অপার বিস্ময় আর শ্রদ্ধাবোধ। অনেক যাত্রী তার সঙ্গে এমন আচরণ করেন যেন সে তাদের বোন। এর এ কাজে সমস্যাই বা কী? ‘এটা তো খারাপ কাজ না, চাক্কা ঘুরলেই টাকা’।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ