ভোলা প্রতিনিধি ॥
এখনো ঈদের আমেজ কাটেনি ভোলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের। ঈদের ছুটি শেষে গত বুধবার সব সরকারি অফিস-আদালত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুললেও ভোলা সদর হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক রবিবার পর্যন্ত তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেননি। ফলে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পাচ্ছেননা। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। এদিকে জরুরী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন হাসপাতালের স্টাফদের স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটা অন্যায়। এ ছাড়া যে সব চিকিৎসক নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগদান করেননি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোলা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বহিরাগত এক ব্যক্তি শাকিবুল হাসান নামের ৫-৬ বছরের এক শিশুকে জরুরী বিভাগের একটি বেডে চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা এ শিশুটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে তাকে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছেন ওই বহিরাগত ব্যক্তিটি। জানতে চাওয়া হলে তার নাম ইউছুফ বলে জানান। জানা গেছে, তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হযরত আলীর ছেলে। এ সময় পাশে অপর একটি বেডে চিকিৎসা দিচ্ছেন হাসপাতালের সিনিয়র ষ্টাফ নার্স হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হযরত আলী অসুস্থ্য থাকায় বাবার অবর্তমানে তার ছেলে ইউছুফ জরুরী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাজেদুল হক কাওসারের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ সময় হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ শরীফুল ইসলাম শরীফকে তার কক্ষে পাওয়া যায়নি।
তবে, সিভিল সার্জন ডাঃ রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, হাসপাতালের কোন স্টাফের স্বজন কিংবা বহিরাগতরা চিকিৎসা দেওয়া অপরাধ। এটা কোন মতেই মেনে নেওয়া যায়না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান সিভিল সার্জন।
এদিকে ভোলা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা বহু রোগী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে এসে চিকিৎসক না পেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে ছিলেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী ছিল নারী ও শিশু। দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসক না পেয়ে অনেক রোগী বাড়ি চলে গেছেন।
বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার আলীনগরের রোগী ইয়াসমিন বলেন, আমার শিশু সন্তান কোলে নিয়ে আমি সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালে এসেছি পেটের ব্যাথা ও গাইনী রোগের চিকিৎসা নিতে। তিনি আরো বলেন, টিকিট কাটার পর আমাকে ১৮ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। কিন্তু ১৮ নম্বর কক্ষে কোন চিকিৎসক নেই। শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দাড়িয়ে রয়েছি। এখানো চিকিৎসকের কোন দেখা পাইনি।
সদর উপজেলার পৌর কাঠালী আদর্শ পাড়ার তানিয়া ২ বছরের শিশু সন্তান নিহাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে। টিকিট কাটার পর তাকে ১৯ নম্বর কক্ষে যেতে বললেও ওই কক্ষে কোন চিকিৎসককে পাননি তিনি। শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে রয়েছেন চিকিৎসকের আসায়। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে গেলেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।
শুধু ইয়াসমিন ও তানিয়া নয়, ভোলা শহরের গাজিপুর রোডের ফাতেমা আক্তার, আলীনগরের ফারজানাসহ বহু রোগী চিকিৎসক না পেয়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দাড়িয়ে রয়েছেন ঘন্টার পর ঘন্টা। সরেজমিনেও ১৮ নম্বর ও ১৯ নম্বর কক্ষে কোন চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র ২০ নম্বর কক্ষে মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাকিবুল হাসানকে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
হাসপাতালের ঝাড়–দার চন্দন বলেন, ১৮ নম্বর কক্ষে চিকিৎসক ডাঃ রেজাউল করিম হাসপাতালেই আছেন। তিনি কিছুক্ষণ পর আসবেন। তবে, ১টা পর্যন্ত কোন চিকিৎসক ১৮ নম্বর ও ১৯ নম্বর কক্ষে আসেননি।
ভোলা আনসার ও ভিডিপির ওয়ার্ড লিডার হাসান বলেন, স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসার জন্য আমি সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও চিকিৎসকের দেখা পাইনি। উল্টো ইসমাইল হোসেন নামের হাসপাতালের এক ঝাড়–দার আমার কাছ থেকে ৫০টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ২০টাকা দিয়েছি। তবে, টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ঝাড়–দার ইসমাইল বলেন, আমি অবৈধভাবে রোগীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, ভোলা সদর হাসপাতালের যে সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারি রশিদ ছাড়া রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিফলেট হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে সাটিয়ে দেওয়া হবে। চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, হাসপাতালে ১৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে অনেকেই ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন। তাদের মধ্যে একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন কনসালটেন্টসহ দুই জন চিকিৎসক এখনো তাদের কর্মস্থলে যোগদান করেননি। যারা এখানো কর্মস্থলে যোগদান করেননি তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএম