গত তেইশ বছরে বাঙ্গালীরে
করত নির্যাতন।
কত নেতা জেল খাটিল
আইয়ুবের কারন।।
তাদের ইচ্ছামত (২) কর্মযত
করত অনিবার।
কারো শক্তি নাহি ছিল
শব্দ করিবার।।
হায়রে দু:খের কথা (২) মনের ব্যথা
ঝরে দুই নয়ন।
বাঙ্গালীর উপরো রাখল
সামরিক শাসন।।
দেখেন কেমন করে (২) শেখ সাবেরে
নিল কারাগারে।
আগরতলা ষড়যন্ত্রে
ফেলিয়া তাহারে।।
কত বেত মারে (২) হুকুম করে
ফাঁসির কাষেঠ দিতে।
সংগ্্রামী নেতারা তখন
নামে সংগ্্রামেতে।।
জাগে ছাত্র শ্রমিক (২) কৃষক সবই
নেতাগণ মিলিয়া।
শেখ সাহেবকে বাহির করলেন
জেলখানা ভাঙ্গিয়া।।
হায়রে কত ছাত্র (২) শহিদ হইল
আইয়ুবের গুলিতে।
তবু নাহি ছাড়ে সংগ্রাম
গুলির ভয়েতে।।
যেমন যম আসিল (২) আইয়ুব ভাবল
আরতো নাই উপায়।
ইয়াহিয়ারে রাজ্য দিয়া
আইয়ুবে পলায়।।
ঘটে কি ফরমান (২) খানের
জল্লাদ পাষাণ।
লাখো লাখো জনতাকে
করিছে কোরবান।।
লেখতে সেই কাহিনী (২) চক্ষের পানি
করে টলমল।
কাগজ ভিজিয়া যায়
চলেনা কলম।।
তখন স্থানে স্থানে (২) মিটিং করে
শেখ মুজিবুরে।
কানি আঙ্গুল দিয়া তখন
জাগায় বাঙ্গালীরে।।
কত কষ্ট করে (২) বাঙ্গালিরে
দিল যখন কহিতে।
মানুষের চিহ্ণ নাহি
থাকিবে বাংলাতে।।
হঠাৎ মিটিং থুইয়া (২) যায় পলাইয়া
ইয়াহিয়া শয়তান।
শেখ সাহেবের বন্দীর অডার
দিল টিক্কা খান।।
টিক্কা ডিআইজিরে (২) অডার করলো
জানাইল ফোনেতে।
শেখ সাহেবরে বন্দী তুমি
কর এই মুহুর্তে।।
ডিআইজি ফোন করে (২) সকল বিষয়
জানায় তাড়াতাড়ি।
আতœগোপন করেন সবাই
বিপদ দেখে বারী ।।
সঙ্গে ছিল যারা (২) রইল তারা
আতœগোপন করে।
পলাইলনা জাতির পিতা
মেলেটেরির ডরে ।।
শেখ সাব ধরা দিল (২) বন্দী হইল
মেলেটেরির হাতে।
কোথায় জানি লইয়া গেল
পঁচিশা মার্চের রাতে।।
টিইক্কার অডার পাইয়া (২) ছিল যত
খানের হানাদার।
সারা টাউন ঘেরিয়া পড়ল
পলকের মাজার ।।
হায়রে কত মা বইনেরে (২) ল্যাংটা করে
ক্যাম্পের ভিতরে।
আবদ্ধ করিয়া রাখছে
খানের হানাদারে।।
কত টিনের ঘর (২) পানের বরে
ঢুকল রেজাকারে ।
কাটা ঘায়ে লবণ দিল
দেশের মীর জাফরে।
হায়রে মায়ের দু:খ (২) দেখত যখন
পড়ত দুই নয়ন ঝরে।
কেমন করিয়া আর
বসে থাকে ঘরে।।
তখন লাখো মায়ের (২) লাখো সন্তান
ইন্ডিয়াতে যাইয়া।
গেরিলা ট্্েরনিং নিল
অস্ত্র হাতে লইয়া।।
মোদের বন্ধু রাষ্ট্র (২) প্রতিব রাষ্ট্র
ভারত হিন্দুস্তান।
সাত কোটি বাঙ্গালীর তুমি
বাঁচাইলা পরান।।
তোমরা যে সাহায্য (২) করিয়াছ
এহি দু:খ দিনে ।
সেই কথা আর ভুলিবনা
বাঙ্গালী জীবনে।।
বাংলার দু:খ যত (২) আদি অন্ত
ভিতরে বাহিরে।
সকল বিষয় তখন
জানায় ইয়াহিয়ারে।।
তখন ইয়াহিয়া (২) বলে যায়
গুরুতর ব্যাপার।
তবু বলছে বিশ্বের কাছে
ভারত সরকার।।
একবার দেখে আসুন (২) বিশ্ববাসী
দয়া হলে মনে।
সোনার বাংলা পরিণত
হইয়াছে শ্মশানে।।
সৈয়দ নজরুল ইসলাম (২) তাইজ উদ্দিন
বাংলার জন্যে।
সব কিছু দিয়াছিলেন
বিজয় করিবেন।।
নামে মুক্তি সেনা (২) কি নমুনা
দেখিতে না পায়।
বিজলীর মত গুলি কইরা
কই জানি পলায়।।
যত রেল রাস্তা (২) নাই আস্তা
ছিল যত পুল।
ডিনামাইট পুঁতিয়া সব
করিল নিস্ফল ।।
যত টেলির তার (২) রাখছে না আর
বন্ধ হইলে টেলি।
গ্রেনেড ছাইড়া মারছে কত
মেলেটেরির গাড়ি।।
কত খানে বোমে (২) ছুটে হায়রে
এলোপাতারি গুলি।
জলের জাহাজ ডোবায় কত
এমনি বোম মেলি ।।
এদিকে শরণার্থী (২) লইয়া ভারত
পড়ছে বেকায়দায় ।
ফিরাইয়া দেশে নিতে
বিশ্বেরে জানায়।।
যারা স্বয়ংসিংহ (২) রাষ্ট্রসঙ্ঘ
কেউ না দিল সাড়া।
রইল চুপ করিয়া (২) তখন হুমকি দিয়েছে
ইয়াহিয়া সরকারে।
দুই এক জায়গায় বোম্পাট করে
ভারতের ভিতরে।।
তখন বাংলা ভারত (২) হইয়া একমত
দিল মুক্তি সেনা।
মুক্তির সাথে একমতে
বাংলায় দিল হানা।।
চলছে বিমান যুদ্ধ (২) হইল স্তব্ধ
ইয়াহিয়ার কামান।
বোম ফালাইয়া বিমান বন্দর
করিল শ্মশান।।
তখন হানাদার (২) যায় কুত্তা খায় কি
গাতার ভিতর থাকে।
বাহিরেতে গেরিলারা
বাঘা বাঘা ডাকে ।।
তখন যারযির মতে (২) পলাইতে
লাগিল হানাদার।
প্রাণ বাঁচাইতে বেহুশ হইয়া
পথ ভুলে তাকাল ।।
তখন এই সুযোগে (২) গাঁয়ের লোকে
লাঠি বাড়ি লইয়া।
যেমন কুত্তা মারা আরম্ভ হইল
বাংলাদেশ জুড়িয়া।।
তখন নদী নালায় (২) দেখা যায়
কত মরা লাশ।
ফুইলা যেমন খাকি পোশাক
হইছে কলার গাছ।।
দালাল মীর জাফর (২) আল বদর
কত মরছে ভাই।
রেজা মাইরা টাল ফালাইছে
পাকুন্দিয়া থানায় ।।
নিয়াজী ফরমান গান্ধী (২) পায়রা কান্দি
কহিল ইয়াহিয়া।
মিত্রসেনা মুক্তিসেনা
বাংলা যায় লইয়া।।
ব্যাপার ঘরোয়াল (২) বলছে যারা
রেডিওর খবর।
আর হইওনা অগ্রসর
বলছে ভারত বার ।।
বলছে পল্লী কবি (২) সাহাবদ্দী
এইতো পড়লে ধরা।
আর আসবেনা কোন কাজে
এইসব আদা পরা ।।
তখন মানিক সাব (২) কয় হে
তর কম আয়ু।
ধামাচাপায় থাকবেনা আর
বাংলার বাঙ্গালী।।
জলদি রাস্তা ধর (২) অস্ত্র ছাড়
বাঁচাইলে জীবন।
আমার সেনার হাতে কর
আতœসমর্পণ।।
নিয়াজী ইহা শুনে (২) ভাবে মনে
ছাড়ে হাতিয়ার।
ষোলই ডিসেম্বর তারিখে
করে সারেন্ডার ।।
খবর রেডিওতে (২) জনমতে
দিল জানাইয়া।
আনন্দে উল্লাসেতে দেশ
উঠিল মাতিয়া।।
যেমন রাত্র ছিল (২) ভোর হ্ইল
আঁধাল গেল দূরে।
নতুন আলো জন্ম হইল
বাংলার ঘরে।।
যদি পাইতাম কাছে (২) দিতাম হেসে
মালা উপহার ।।
সুরাইয়া আক্তার
গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।