২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:২৪

ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের শুনানি ২২ অক্টোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় ভারতীয় তিন টিভি চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস ও জি সিনেমা বন্ধ করা সংক্রান্ত রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য আগামী ২২ অক্টোব দিন ধার্য করেছেন চেম্বার জজ আদালত। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত শুনানির জন্য এই দিন ধার্য করে আদেশ দেন। পরে রিটকারী আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় তিন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজের করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আইনজীবী একলাস উদ্দিন ভূঁইয়া ওই আবেদন করেন।

তার আগে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ভারতীয় তিনটি চ্যানেল বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে বাস্তবতা নিয়ে চোখ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তবে এমন কোনো অনুষ্ঠান দেখানো ঠিক নয়, যা আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে ব্যাহত করে। এক্ষেত্রে কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইন-২০০৬ এর ১২ ধারা অনুযায়ী একটি কমিটি করার বিধান রয়েছে। যেই কমিটির দায়িত্ব টেলিভিশন অনুষ্ঠান মনিটরিং করা।

আদালত আরও বলেছেন, কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ফলে যদি ব্যক্তিগতভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সংক্ষুব্ধ হয়, তবে তাকে সরকারের কাছে অভিযোগ করতে হবে। আইন অনুযায়ী এ সংক্রান্ত অভিযোগ সরকারকে সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হয়। কিন্তু রিটকারী সে ধরনের কোনো আবেদন করেননি।

আদালত বলেন, এই রিটের কোনো মেরিট (গুণাগুণ) আমরা খুঁজে পাইনি। তাই এই রিট খারিজ করা হলো।

২০১৪ সালের ২ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পাখি প্রেমে প্রাণ বিসর্জন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ঘরে ঘরে বাড়ছে ভারতীয় টিভির ধারাবাহিক নাটকের জনপ্রিয়তা। এসব সিরিয়ালপ্রীতির কারণে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ক্রমেই দর্শক হারাচ্ছে, দেশ হারাচ্ছে নিজস্ব সংস্কৃতি। কিশোরী-তরুণীদের ফ্যাশনেও এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

সর্বশেষ ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল স্টার জলসার ‘বোঝেনা সে বোঝে না’ সিরিয়ালের ‘পাখি’র প্রেমে প্রাণ গেল এক যুবক ও মেয়ে শিশুর। ‘পাখি চরিত্রে রূপদানকারী তরুণীর পোশাকের অনুকরণে এবার ‘পাখি’ নামের একটি পোশাক দেশের ঈদ বাজারে জমজমাট ব্যবসা করেছে। ঈদে চড়া মূল্যের এ জামা নতুন স্ত্রীকে কিনে দিতে না পারার ব্যর্থতায় আত্মহত্যা করেছে এক জন। ঈদের আগের দিন বগুড়ার শেরপুরের নন্দতেঘরী গ্রামে শাহীন নামের ওই যুবক আত্মহত্যা করেন।

পাখি’র মরণকামড় থেকে ছাড় পায়নি ১০ বছরের শিশুও। পাখি নামের পোশাক না পেয়ে অভিমানে ঈদের দুই দিন আগে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে নূরজাহান নামে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে।

পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর, ভারতীয় এসব চ্যানেল বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি ডাক ও রেজিস্ট্রিযোগে এই বিষয়ে একটি নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের জবাব না দেওয়ার-ই সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে জনস্বার্থে ভারতীয় চ্যানেলে বন্ধ চেয়ে রিট করা হয় বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবীরা।

রিটে ওইসব খবর সংযুক্ত হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন আইনজীবী সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী। রিটে বলা হয়, ২০০৬ সালের কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আইনের কতিপয় ধারা লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই সমস্ত চ্যানেল বাংলাদেশে প্রচারিত হচ্ছে। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর ভারতীয় এ তিন টিভি চ্যানেল বন্ধে নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আর রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া। স্টার জলসা ও স্টার প্লাসের পক্ষে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু এবং জি বাংলার পক্ষে আইনজীবী শামসুল হাসান শুনানি করেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জুন ২১, ২০১৭ ৯:২৩ অপরাহ্ণ