২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৯

রাতদিন চাকা ঘুরলেও হতাশ পাবনার তাঁতিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিরতিহীন খট খট শব্দে চলছে তাঁতের চাকা। কাপড় বোনায় ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। ঈদ সামনে রেখে প্রান্তিক তাঁতিরাও চালু করেছেন বংশ পরম্পরায় আঁকড়ে থাকা হস্তচালিত তাঁত। তবে বাড়তি লাভের সে আশায় এ বছর হতাশাই মিলছে তাদের।

পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি, ভাড়ারা, জালালপুর, নতুনপাড়া, গঙ্গারামপুর, বলরামপুর, মালঞ্চি, কুলুনিয়া, খন্দকারপাড়া, কারিগরপাড়া, সাঁথিয়া উপজেলার ছোন্দহ, ছেচানিয়া, জোড়গাছা, সনতলা, কাশিনাথপুর, বেড়া উপজেলার কৈটলা, পাটগাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় হ্যান্ডলুম ও পাওয়ার লুম মিলিয়ে তাঁতের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। চলতি বছর ১০০ কোটি টাকার শাড়ি-লুঙ্গির বাজার টার্গেট করে কাজে নেমেছিলেন তারা। তবে রং, সুতার চড়া দাম আর অব্যাহত লোডশেডিংয়ে তাদের সে উৎসাহে পড়েছে ভাটা।

দেশের বিখ্যাত কাপড়ের হাট পাবনার আতাইকুলা হাটসহ শহরের বিপণি বিতানে বাহারি ও নানা রঙের তাঁতের শাড়ি ক্রেতাদের মুগ্ধ করেছে। এসব উন্নতমানের শাড়ি এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। বিদেশের বাজারে ‘পাবনাই’ তাঁতের শাড়ির বেশ কদর।

ঢাকার বুটিক হাউস কেক্রাফট তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে কানাডা ও আমেরিকা এবং নাগরদোলা বুটিক হাউস ইংল্যান্ডে পাবনার শাড়ি রফতানি করছে বলে তাঁত মালিকরা জানিয়েছেন। ভারতের দিল্লী, বারাসাত, হুগলি, কলকাতা, শুভরাজ, গঙ্গা, রামপুর, পাটনাসহ অনেক বড় শহরের পাবনাই শাড়ির ব্যাপক চাহিদা ও মার্কেট রয়েছে। তবে এ রফতানির সুফল প্রান্তিক তাঁতিরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

পাবনার জালালপুর এলাকার এপেক্স টেক্সটাইলের স্বত্ত্বাধিকারী বুলবুল আহমেদ বলেন, সারাবছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা রমজানের প্রতিক্ষায় থাকি। কয়েকটি বড় কোম্পানির কাজের অর্ডার পেয়েছি। কিন্তু প্রতিদিন বিদ্যুতের যন্ত্রণায় কাজ করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, দিনে মাত্র ৩/৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। জেনারেটর চালিয়ে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে প্রতিটি লুঙ্গির থানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ বেশি হচ্ছে। কোম্পানি তো আমাকে এ অতিরিক্ত টাকা দেবে না। ফলে দিনের শেষে লোকসানই থাকছে কপালে।

একই এলাকার তাঁত ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী বলেন, কোম্পানি আমাদের কাপড় নিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছে, ভালো লাভ করছে, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। আমাদের পুঁজি সঙ্কট, নিজেরা বড় পরিসরে ঝুঁকি নিতে পারি না। ঘুরেফিরে কোম্পানির কাছেই ফিরে যেতে হয়। সে সুযোগে তারা আমাদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে। কয়েক পুরুষ ধরে তাঁত ব্যবসা করে আসা দোখাছী গ্রামের আব্দুল হালিম ব্যবসার অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক আশা লিয়ে এবার সমিতির টেকা তুলে পাঁচ খেন তাঁত চালু করিছিলেম। ভাবিছিলেম ঈদে ভালো লাভ হবি। কিন্তুক লাভ তো দূরের কথা, পাঁচটা তাঁতে লাখ পাঁচেক টেকা দেনা হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে মহাজনী সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমানো ও তাঁতব্যাঙ্ক গঠন করে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার দাবি জানালেন পাবনা শিল্প ও বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম মুকুল।

তিনি বলেন, প্রান্তিক তাঁতিদের সরলতার সুযোগে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তাদের জিম্মি করে রেখেছে। ক্ষুদ্র তাঁতিদের শ্রম-ঘামের সবটুকুই শুষে নিচ্ছে তারা। সরকারের উচিৎ এ শিল্পকে বাঁচাতে এর প্রতি নজর দেওয়া।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুন ২১, ২০১৭ ১২:৫৭ অপরাহ্ণ