নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতীয় নির্বাচনে মনোযাগ দিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটি সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার উদ্যোগ যেমন নিয়েছে, তেমনি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতা না হলে কার্যকর আন্দোলনের ওপর জোর দিয়ে সামনে এগোচ্ছে।
বিএনপির নীতি-নির্ধারকেরা মনে করছেন, সরকার চেষ্টা করলেও আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতায় তাদের পৌঁছতেই হবে। নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ীÑ বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েই এখন নিজেদের প্রস্তুত করছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকারী মাঠের বিরোধী দল বিএনপি আগামী নির্বাচন নিয়ে কট্টর কোনো অবস্থানে নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ না হওয়ায় ওই নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে নেমেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। জানা গেছে, বিএনপি আগামী নির্বাচন নিয়ে অন্যসব বিকল্পের চেয়ে বেশি পক্ষপাতি আলোচনার। বিএনপি আলোচনার টেবিলে যে দু’টি বিষয়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে চায় তা হচ্ছেÑ নির্বাচনকালীন সরকার এবং শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন জরুরি। বিএনপির দাবিই তা। কিভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন হতে পারে, সেজন্য আলোচনা হওয়া উচিত। আমরা আলোচনা চাই।
জানা গেছে, নির্বাচনের পথে বিএনপির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবেই আগামী ১০ মে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ভিশন-২০৩০’ তুলে ধরবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষমতায় গেলে নতুন ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দলের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এতে তুলে ধরবেন বিএনপি প্রধান। এ ছাড়া রোজার ঈদের পরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ফর্মুলাও তুলে ধরবে বিএনপি।
জানা গেছে, নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে দল পুনর্গঠনের কাজে হাত দিয়েছে বিএনপি। সারা দেশে পুরোদমে চলছে দল গোছানোর কাজ। বিএনপি নেতাদের মতে, দল গোছানোর প্রায় ৭০ ভাগ কাজ তারা সেরে ফেলেছেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতি ও দল গোছানোর অংশ হিসেবে এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে সারা দেশে বিএনপির ৫০টি টিম মাঠে নেমেছে। পক্ষকালব্যাপী এ সফরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলীয় কোন্দল মিটিয়ে ফেলার পাশাপাশি আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল শনিবার খুলনায় এক কর্মিসভায় বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে দলটি দ্বিতীয়ত গুরুত্ব দিচ্ছে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর দিকে। দলের হাইকমান্ডের উপলব্ধি-বিগত সময়ে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের কিছু দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপির দাবির পক্ষে সমর্থন আদায়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি যার যার অবস্থান থেকে কাজ করছে। দায়িত্বের বাইরে যাতে কেউ অযাচিত কোনো কর্মকাণ্ড না করতে পারেন সেই বিষয়টিও হাইকমান্ড তদারকি করছে।
কূটনৈতিক তৎপরতার সাথে যুক্ত দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকার বহির্বিশ্বে ভুল মেসেজ দিয়ে নিজেদের পক্ষে কিছুটা সমর্থন আদায় করলেও গণতন্ত্রের প্রশ্নে তাদের অবস্থান পাল্টায়নি। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্র মনে করে শক্তিশালী গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া উচিত। এ নেতার বক্তব্য অনুযায়ীÑ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর বেশ চাপ রয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এই চাপ তত বাড়বে।
বিএনপির সূত্র মতে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে আন্দোলনকে হাতে রেখেছে বিএনপি। তবে সেই আন্দোলনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে বিএনপি। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে বড় ধরনের আন্দোলনে যাবে না তারা। তৃণমূল থেকে শীর্ষ প্রতিটি পর্যায়ে আলোচনা করে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দলের সিনিয়র এক নেতা জানান, ২০১৫ সালে সর্বশেষ দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে বিএনপি। এর প্রধান কারণ ছিলÑ কার্যকর পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ করে আন্দোলনের ঘোষণা চলে আসা। সিনিয়র এবং মধ্য সারির নেতারা আন্দোলনের বিষয়ে তখন খুব একটা অবগত ছিলেন না। পরিকল্পনাহীন আন্দোলন এবং পরে সরকারি জুলুম নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় ওই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। এবার আর সেই ভুল হবে না। আন্দোলনের মতো আন্দোলন হলে মাত্র ৭ দিনেই সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ওই নেতা।