২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৫১

প্রকল্পের ভাগ না দিলে ফাইল আটকে দেন আ’লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জেলার রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন, স্বেচ্ছাচারীতা, সরকারি বরাদ্দ লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানরা। সোমবার বিকেলে রাজনগর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ১৫টিরও বেশি অভিযোগ আনেন আ’লীগের এই নেতার বিরোদ্ধে।

লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির খান ২০১৪ সালের মার্চ মাসে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতা করছেন। সরকারি  টিআর/কাবিখা বরাদ্দের শতকরা ২০ ভাগ তিনি ইচ্ছামতো বন্টণ করে অনিয়ম করে থাকেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে তাকে না দিলে তিনি স্কীমের ফাইলে স্বাক্ষর না করে ফাইল আটকে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস, মুন্সিবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ছালেক মিয়া, পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান শামছুন নূর আজাদ, সদর ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ সালেক, টেংরার ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান রিপন মিয়া, কামারচাক ইউপি চেয়াম্যান নজমুল হক সেলিম ও মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত স্বাক্ষর করেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত। এছাড়াও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সজল চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন। ডেপুটি কামান্ডার কুতুবুর রহমানও চেয়ারম্যানদের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির খান গত বছরের ২১ ডিসেম্বরের আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কামারচাক ইউনিয়নের যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মছব্বিরের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনিই গত ১০ জুন ওই যুদ্ধাপরাধির ছেলের শাড়ি বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী।

অভিযোগে আরো বলা হয়, এডিপি প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে তিনি গুরুতর অনিয়ম করেছেন। নির্ধারিত ঠিকাদারের কারণে এবছরের এডিপির কাজে লেস/এবাবে কাজ করা হয়নি। ফলে পরিষদের উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয় হিসেবে সাবেক বাসাটি বিভন্ন অর্থবছরে ২০ লাখেরও বেশি টাকায় সংস্কার করা হয়। কিন্তু তিনি ওই অফিস ব্যবহার না করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বিনোদন কেন্দ্র দখল করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অফিসের কাজ করিয়ে বিল নেন। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের বিনোদন কেন্দ্র জোরপূর্বক দখল করায় তারা বিনোদন বঞ্ছিত হচ্ছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপজেলা পরিষদের সরকারি জীপ পরিষদের চালক দ্বারা ব্যবহার করছেন না। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত চালক দিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে গাড়ির জ্বালানি ও মেরামত বিল নামে-বেনামে উত্তোলন করছেন। এছাড়াও জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভা, জেলার আইন শৃঙ্খলার সভায় দীর্ঘ দিন থেকে না যাওয়ার কারণে সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে রাজনগর উপজেলাবাসী বঞ্ছিত হচ্ছেন এবং উপজেলার আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলেও তিনি জেলার সভায় তা উপস্থাপন না করায় উপজেলার আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে না। অথচ তিনি এসবের ভ্রমন বিল উত্তোলন করছেন। এছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আছকির খান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরকারি গভীর নলকুপ একক ভাবে নিজের পছন্দের লোকদের মধ্যে অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণ করায় প্রকৃত সুবিধা বঞ্ছিত মানুষ সরকারি সেবা বঞ্ছিত হয়েছেন। লিখিত বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে প্রাইমারী শিক্ষক আসাদুজ্জামান খান রাসেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলা হয়, চেয়ারম্যান শিক্ষা কমিটির সভাপতি থাকায় প্রাথমিক শিক্ষকদের অর্থের বিনিময়ে বদলি করে থাকেন। তাদের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে চান না।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খান শীর্ষ নিউজকে বলেন, আমি জানি আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। অজান্তে কোনো কিছু হয়ে থাকলে এর জন্য বৈধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সুষ্টু তদন্ত করা প্রয়োজন। কেউ মনগড়া বক্তব্য দিলে হবে না।

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

 

প্রকাশ :জুন ২০, ২০১৭ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ