২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৫১

নির্বাচনী আচরণবিধি দেখভাল : দায়িত্বে আছেন দৃশ্যে নেই

আর দুই দিন পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে আগামীকাল রাতে। প্রচারণাকালে প্রার্থীদের আচরণবিধি দেখভালের দায়িত্বে নির্বাচন কমিশন থেকে দায়িত্বে আছেন দুই সিটিতে ৪৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তবে সর্বত্রই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও তাদের দায়িত্ব তেমন দৃশ্যমান ছিল না এই সময়ে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা ও প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নানা সময়ে।

এমনকি খোদ একজন নির্বাচন কমিশনারও এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ইউও নোট দিয়েছেন সিইসি, চার কমিশনার ও দুই রিটানিং কর্মকর্তাকে। তবে তাতে কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে জানা যায়নি।

দুই সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, তাদের কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে তার নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন তারা।

কিন্তু মাঠপর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রার্থী ও সমর্থকদের দৃশ্যমান আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে দেখা যায়নি। অথচ নির্বাচনী ক্যাম্প, মাইকিংয়ে লঙ্ঘন করা হচ্ছে আচরণবিধি।

জানা গেছে, দুই সিটিতে প্রায় সমানসংখ্যক অভিযোগ মিলে ১৪০টির মতো অভিযোগ পড়েছে বিভিন্ন প্রার্থীর কাছ থেকে। এর মধ্যে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা একে-অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, পোস্টার ছেড়া, কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ বেশি। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষ থেকে।

গত পক্ষকালের বেশি সময় ধরে যখন-তখন মাইক বাজানো, নিয়মের বাইরে প্রচারণা করা, ফুটপাত দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প করা, বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী-সমর্থক নিয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়গুলো হরহামেশা ঘটেছে। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, এক এলাকায় একটি মাইক ব্যবহার করা যাবে, দুপুর দুইটার আগে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। এই নিয়ম থোড়াই কেয়ার করছেন প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আচরণবিধি প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য ঢাকা উত্তরের ৫৪ ওয়ার্ডের জন্য ১৮ জন এবং দক্ষিণের ৭৫ ওয়ার্ডের জন্য ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত রয়েছেন। অর্থাৎ, প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু প্রার্থী ও তার সমর্থকদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা চলছেই। ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই তেমন একটা।

ভোটের আগে ৩০ জানুয়ারি মাঠে নামবেন আরও ১২৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট। সেক্ষেত্রে প্রতি ওয়ার্ডে থাকবেন একজন করে।

ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ৬৫টি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। সব কটির ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আর্থিক জরিমানা করা হয়নি কাউকে।

তিনি বলেন, অনেক প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক করা হয়েছে। অনেককে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে।

আর উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘৭০টির মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে। সবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’

কোন ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, ‘অননুমোদিত নির্বাচনী ক্যাম্প ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাউকে সতর্ক করা হয়েছে কিংবা মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মাইক ভাঙচুরের অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে।’ এর চেয়ে বড় ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের তেমন অভিযোগ পাননি বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাস কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। এ ছাড়া ইসিকে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও দেওয়া আছে।

এ বিষয়ে কমিশনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত ২০ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তাতে তিনি বলেন, দুই সিটির নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। আচরণবিধি লঙ্ঘন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ পরিপত্র জারি করারও তাগিদ দেন তিনি।

আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো ধরনের মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে চাইলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশকে জানাতে হবে। যাতে ওই জায়গায় চলাচল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে

বাস্তবে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে দেয়া সময়ের বাইরেও প্রচারণা চালানোর অভিযোগ আছে। গত রবিবার ওয়ারীতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের প্রচারণার সময় সংঘর্ষের পর এমন অভিযোগ করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আচরণবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি থাকলেও তা এই নির্বাচনে কার্যকর হয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ দিনরাত চোখের সামনে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়ার খবর শুনিনি।’

তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় কমিশনের হাতে অনেক ক্ষমতা দেয়া থাকে। ইচ্ছা থাকলে তা প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু সেজন্য সদিচ্ছা থাকতে হবে। সেটির বড় অভাব রয়েছে।

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৯, ২০২০ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ