এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত ভর্তির সঙ্গে গভর্নিং বডি জড়িত থাকার প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলেও শুধুমাত্র আমাকে একতরফাভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ করাটা কতটা যৌক্তিক, তা আবার বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ সূত্র ও স্মারকে উল্লিখিত বিষয়ের সঙ্গে আমার নীতিনৈতিকতা ও অনিয়মের কোনও প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসন সংখ্যার অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়টি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে এবং প্রয়োজনে আমার ব্যক্তিগত শুনানির গ্রহণ করে দায়ীদের চিহ্নিত করে কারণ দর্শানো নোটিশ থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির উপ-পরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদার বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে নোটিশ করা হয়েছে। বিষয়টি মাধ্যমিকের হলেও অধ্যক্ষ তো কলেজের। নোটিশের জবাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
তবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) সালমা জাহান বলেন, ‘স্কুল অ্যান্ড কলেজের সংশ্লিষ্ট অভিযোগ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব মাউশির মাধ্যমিক উইংয়ের।’ মাউশির একাধিক কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই কথা জানিয়ে বলেন, ‘অতি উৎসাহী হয়ে কলেজ উইং শোকজ করেছে।’
মাউশির এই কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম বলেন, ‘গত ২৯ আগস্ট আমি কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছি। আমি ভর্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলাম না। আগে থেকেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৬ জানুয়ারি ভর্তি শুরু করা হয়। আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৩ জানুয়ারি। আমার দায়িত্ব পালনকালে অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তির বিষয়ে প্রতিবাদ করেছি। ভর্তি ফরমে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক হলেও আমি অনৈতিক কাজ করবো না বলেই ভর্তি ফরমে স্বাক্ষর করিনি। আমি গভর্নিং বডির কথামতো কাজ না করার কারণে এবং অতিরিক্ত ভর্তি কার্যক্রম বৈধ করতে তড়িঘড়ি করে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আমি অধ্যক্ষের পদে আবেদন করলে গত ২৮ মার্চ আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সুতরাং ২০১৯ সালের অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদবির ও আধা-সরকারি পত্র (ডিও লেটার) এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, সদস্য ও প্রভাবশালীদের চাপে করা হয়। এই ভর্তির পর অভিযোগ ওঠে ভিকারুননিসায় অতিরিক্ত ভর্তিতে বাণিজ্য করা হয়েছে।
এই অভিযোগের পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হলে বছরের শেষ দিকে এসে গত ২২ আগস্ট অব্যাহতি পাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানো নোটিশ করে মাউশির সহকারী পরিচালক কলেজ-৩ শাখা।
অধ্যক্ষকে নোটিশের নেপথ্যে
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত ভর্তি বৈধ করতে প্রতিষ্ঠানটিতে তড়িঘড়ি করে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়। গঠিত নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে মাউশির মহাপরিচালকের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন)। অন্য চার সদস্যের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম, বিদায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং অভিভাবক প্রতিনিধি ছিলেন দুজন।
জানা গেছে, নিয়োগ চূড়ান্ত করার আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও নিয়োগ কমিটির অনিয়ম তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও নিয়োগ কমিটি বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ৪ জুলাই জারি করা ওই বাতিল আদেশে বলা হয়, ‘এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য ইতোপূর্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ভবিষ্যতে স্বনামধন্য কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগ কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার অনুরোধ করা হলো।’
মন্ত্রণালয়ের আদেশের এই অংশে ক্ষিপ্ত হন মাউশির পরিচালক কলেজ উইং এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। এ কারণে অতিরিক্ত ভর্তিতে জড়িত মূল দায়ীদের বাদ দিয়ে শুধু হাসিনা বেগমকে শোকজ করে মাউশির কলেজ-৩ শাখা।