নিজস্ব প্রতিবেদক:
হত্যা মামলার জামিন শুনানিতে আদালতের কাছে পবিত্র রমজানের দোহাই দিয়ে আসামিকে মাফ করে দেওয়ার আবেদন করেছেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বাসেত মজুমদার। আদালত তথ্য-প্রমাণ এবং আইনের উপযুক্ত ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে যে কোনো মামলার রায় বা আদেশ দেন। আইনজীবী হিসেবে সেটি জেনেও বাসেত মুজমদার এই আবেদন জানান।
আর বৃহস্পতিবার সুপ্রিমকোর্টের ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অকপটে তা স্বীকার করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এই ভাইস-চেয়ারম্যান।
গত ৬ জুন দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘পুলিশকে ভুল ব্যাখ্যা: আইনজীবী বাসেত মজুমদারকে ভর্ৎসনা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতেই তিনি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার জুনিয়র আইনজীবী রেজাউল করিম একটি আগাম জামিন শুনানির জন্য অত্যন্ত পীড়াপীড়ি করে, শেষ পর্যন্ত তার অনুরোধে এই মামলাটি শুনানি করি। আসামির বিরুদ্ধে ৩১৬/৩০৭ ধারাসহ অন্যান্য ধারায় অপরাধ ছিল। বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এএনএম বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানিকালে বলেন- অপরাধ অত্যন্ত গুরুতর, তাকে আগাম জামিন দিব না। তাকে জেলে পাঠিয়ে দিব এবং পুলিশকে বললেন ব্যবস্থা করার জন্য।’
‘গরীবের আইনজীবী’ খ্যাত বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আমি মক্কেলের পক্ষে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করলাম, দয়া করে এই রোজার মাসে তাকে ক্ষমা করে দেন। এ পর্যায়ে কোর্টের সঙ্গে কিছু কথাবার্তা হয়। এক পর্যায়ে কোর্টের কথাবার্তায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, কোর্ট বোধ হয় আসামিকে ক্ষমা করেছেন।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘কিছু দিন থেকে আমি অনুভব করছি, কথা শুনতে আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে। তাই কোর্ট থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশের জিজ্ঞাসায় আমি বলেছি- মনে হয়, কোর্ট বিষয়টি ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই বলে আমি অন্য কোর্টে চলে গেলাম।’
বাসেত মজুমদার বলেন, ‘পরে আমাকে সংবাদ দিল কোর্টে আসার জন্য। কোর্টে আসলে বিচারপতিরা আমাকে বললেন- আমরা তো তাকে ছাড়ি নাই। আপনি তাকে ছাড়তে বললেন কেন? আমি বললাম, যা হোক বোধ হয় আমার শুনতে অসুবিধা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই পর্যায়ে বিচারপতি আমাকে আদেশ দিলেন জুনিয়রকে নিয়ে আসার জন্য। পরে জুনিয়রকে খবর দিয়ে নিয়ে আসলাম এবং বিচারপতি তাকে আদেশ দিলেন- মক্কেলকে নিয়ে আসার জন্য এবং জুনিয়র কিছুক্ষণ পরে মক্কেলকে নিয়ে আসলেন এবং মাননীয় আদালত আসামিকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিলেন।’
বাসেত মজুমদার দাবি করেন, ‘আমার উপরের বর্ণিত ঘটনা পত্রপত্রিকা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। এতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনসহ আইনজীবী বাসেত মজুমদারের জুনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ব্যবসায়ী নাজিমুদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে আসামি কুদ্দুস কসাই। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১২ এপ্রিল বায়েজিদ বোস্তামী থানায় শীর্ষ এই সন্ত্রাসীসহ মোট ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
এ মামলায় জামিন নিতে এসেছিলেন আসামি আব্দুল কুদ্দুস কসাই। মাদক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত আব্দুল কুদ্দুস কসাই চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
তিনি স্থানীয় যুব সংগঠক কর্মী মেহেদী হাসান বাদল হত্যা মামলারও আসামি।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ