খেলা ডেস্ক
প্রথমার্ধেও আক্রমণাত্মক খেলেছে লিভারপুল। কিন্তু চেলসির মতো দলের বিপক্ষে সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল হতে পারত আরও বড়। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে গিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপ তার খেলোয়াড়দের কী দীক্ষা দিয়েছিলেন সেটা হয়ত জানা যাবে না। কিন্তু আঁচ করা গেল খুব ভালোভাবেই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দশ মিনিট ‘হেভি মেটাল’ ফুটবল খেলল লিভারপুল। বৈশাখের প্রথম দিনে বাংলাদেশে খটখটা রোদ থাকলেও অ্যানফিল্ডে চেলসির ওপর দিয়ে বয়ে গেল কালবৈশাখী ঝড়। দুই মিনিটের ওই ঝড়েই উড়ে গেছে চেলসি। প্রথমে সাদিও মানে, ও পরে মোহামেদ সালাহ করলেন দুর্দান্ত আরেক গোল।
২-০ গোলের জয় নিয়ে তাই আবারও প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে উঠেছে অলরেডরা। এর আগে ক্রিস্টাল প্যালেসকে হারিয়ে কয়েক ঘন্টার জন্য শীর্ষে ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার দল দুইয়ে আছে ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে। আর লিভারপুলের পয়েন্ট ৮৫। তবে সিটিজেনদের শেষ ৫ ম্যাচের ভেতর খেলতে হবে টটেনহাম হটস্পার ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষেও। আর লিভারপুলের রাস্তাটা অনেকটাই সহজ সেই তুলনায়। শেষ ৪ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ কার্ডিফ সিটি, হাডার্সফিল্ড, নিউক্যাসেল ও উলভস।
অ্যানফিল্ডে অবশ্য ম্যাচের শুরু থেকেই পথ হারায়নি লিভারপুল। মাত্র ৬ মিনিটে কেপাকে কাজে নামিয়ে দিয়েছিলেন সালাহ। তার শট সে দফায় ঠেকিয়ে দেন চেলসি গোলরক্ষক। খেলার নিয়ন্ত্রণ লিভারপুলের কাছে থাকলেও প্রথমার্ধ শেষের আগে সূবর্ণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন মানে। ৩৮ মিনিটে ডানদিক থেকে ডিবক্সের ভেতর বল পেয়েও মেরেছিলেন অনেক ওপর দিয়ে। লিভারপুলের আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে নিজেদের অর্ধেই কোনঠাসা ছিল চেলসি। উইলিয়ান একবার নিজেই ভালো সুযোগ তৈরি করেও মেরেছিলেন দিক নিশানাহীন শট। এডেন হ্যাজার্ড যা একটু ভীতি ছড়াচ্ছিলেন, একা তিনিও তেমন সুবিধা করতে পারেননি প্রথমার্ধে। তার সঙ্গে নামা কলাম হজসন ওদয়ও বড় ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করার মতো কিছু করেননি।
তবে স্নায়ুচাপটা আস্তে আস্তে বাড়ছিল অ্যানফিল্ডে। পা হড়কালেই তো শেষ! সেই চাপ থেকে ৫১ মিনিটে মুক্তি দিলেন সাদিও মানে। জর্ডান হেন্ডেরসন ডানদিক থেকে যখন ক্রস করলেন তখনই বোঝা গিয়েছিল এই আক্রমণ থেকে কিছু একটা পাবে লিভারপুল। বাকি কাজটা করেছেন মানে। ফারপোস্টে লাফিয়ে উঠে হেডে করেছেন গোল।
মানের গোলের রেশ না কাটতেই জাদু দেখালেন ইজিপশিয়ান কিং। মিডফিল্ড থেকে ভার্জিল ভ্যান ডাইক লং বল পাঠিয়েছিলেন ডানদিকে। সালাহ রিসিভ করলেন, এরপর কাট করে একটু ভেতরে ঢুকলেন। তখনও গোল থেকে ২৫ গজ দূরে তিনি। এরপর বাম পায়ে করলেন ধনুকের মতো বাঁকানো এক শট। সেটা গিয়ে আছড়ে পড়ল কেপার গোলের ভেতরে। গোলের সঙ্গে মানানসই একটা উদযাপনও করে ফেললেন সালাহ। শিরোপা জিতে গেলে দুই হাত জোড় করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সালাহর ছবিটা শেষ পর্যন্ত বাঁধিয়ে রাখতে পারেন অনেক লিভারপুল সমর্থকই।
দ্বিতীয় গোলের পর আস্তে আস্তে খেলার গতি কমিয়ে আনে ক্লপের দল। গঞ্জালো হিগুয়াইন নেমেছিলেন ৫৬ মিনিটে। তিনিও আরও একটি ম্যাচ পার করেছেন ছায়া হয়ে। তবে হ্যাজার্ড ছিলেন নিজের মতোই। আরেকটু হলেই চেলসিকে হয়ত ফিরিয়েও আনতে পারতেন ম্যাচে। একবার অ্যালিসন ফিরিয়ে দিলেন তাকে দারুণ এক সেভে। পরেরবার বারপোস্টে লেগে ফেরত আসলো হ্যাজার্ডের শট। ওই সময়ে লিভারপুলকে খেলতে হচ্ছিল কাউন্টার অ্যাটাকে। তবে চেলসি সেই ধারটা ধরে রাখতে পারেনি খুব বেশিক্ষণ। এরপর লাগাম টেনে ধরে বাকিটা সময় হেসে খেলেই পার করে দেয় লিভারপুল।
অ্যানফিল্ডে তাই আরেকবার পিছলে পড়তে হয়নি অলরেডদের। অ্যান্ডি রবার্টসন যদিও একবার স্টিভেন জেরার্ডের সেই ২০১৪ সালের মুহুর্তটা ফেরত এনেছিলেন। কিন্তু সেটা আর আফসোসে পোড়ায়নি অ্যানফিল্ডকে। বরং দারুণ এক জয়ে অপূর্ণ সেই স্বপ্নের পথেই হাঁটছে লিভারপুল। কিন্তু হেরে গিয়ে চেলসির রাস্তাটা হয়ে গেছে কঠিন। ৩৪ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে চারে থাকা মাউরিসিও সারির দল সুযোগ করে দিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটে আর আর্সেনালকে। এক ম্যাচ কম খেলে রেড ডেভিলদের পয়েন্ট ৬৪ আর আর্সেনালের ৬৩। গানারদের হাতে বেশি আছে দুই ম্যাচ।