মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সরকার পরবর্তী সংসদ নির্বাচনও সদ্য সমাপ্ত খুলনা সিটি নির্বাচন মডেলেই করবে। খুলনা নির্বাচন নিয়ে তার বক্তব্যে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে যে কারো অংশগ্রহণ করা হবে আত্মঘাতীমূলক।
রিজভী এও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুলনাসহ সারাদেশের ভোটারের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ হুঁশীয়ারী দেন।
রিজভী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের কারণেই খুলনা নির্বাচনে মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। রিজভী বলেন, উল্টো প্রধানমন্ত্রী দম্ভের সঙ্গে পাল্টা প্রশ্নও কে ছেন, “এমন সুষ্ঠু নির্বাচন দেশে কবে হয়েছে?”
রিজভী আহমেদ বলেন, অবৈধ সরকারের অবৈধ ক্ষমতার দৌরাত্ম্যে প্রধানমন্ত্রী ভোটারদের অধিকার বঞ্চিত করে এখন তাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন।
রিজভী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেনি’- এটি তার একটি ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার’। এর উদাহরণ হলো, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গতকাল গাজীপুরের টঙ্গীতে স্থানীয় এক এমপির বাসায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে মন্ত্রী-এমপিদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, কর্নেল ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দিপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকিসহ আরও অনেকে। এটা নির্বাচনি আচরণ বিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ ঘটনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের এক ‘গভীর নীলনকশার বীভৎস আভাস’ ফুটে উঠছে।’’
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার নতুন মডেলের ‘চমৎকার’ নির্বাচনে খুলনা সিটির অর্ধেকেরও বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি। কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেননি হাজার হাজার ভোটার। নির্বাচনের পর লজ্জায় আজও নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে পারেনি।
রিজভী জানান, যে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জাল ভোট দেয়াসহ নানা অনিয়মের তদন্ত দাবি করছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র তার বাবার সঙ্গে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, ‘মরা মানুষ’ ভোট দিতে পারে, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারতে পারে, সে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, ভোট ডাকাতির হুকুমদাতা সরকারের শীর্ষ নেতারা।
নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন পুরোপুরে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। নির্বাচন কমিশনের যে রকম নিয়ম, তাতে আমাদের হাত-পা বাঁধা। তারা মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি।’
রিজভী আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচন কমিশনে আপনাদের পছন্দের লোক বসিয়ে সুষ্ঠু ভোট যাতে না হয় সে জন্য তাদের হাত-পা বেঁধে দিয়েছেন। ইসি খুলনাতে সরকারে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য স্বর্ণালি বাহিনী নয় ইসি, বরং এখন তারা “খাঁচায় পোষা তোতাপাখি মাত্র”।
সরকার তার কর্তৃত্ব সম্প্রসারণ করে ইসিকে কব্জায় নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, খুলনার সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভোট-সন্ত্রাসের এক অভিনব মডেলের নির্বাচন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি খারাপ নজির সৃষ্টি করেছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজকে নির্যাতনের জন্য আবারো রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তরুণ সমাজকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্যই এমনটি করা হয়েছে। এই দু’জন ছাড়াও গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানান তিনি।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান প্রমুখ।
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ