২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৪৭

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নথিতে ১৩ টি বড় ভুল: বিএনপি

মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে তৈরী করা আক্রোসের নথিতে ১৩টি ভুল রয়েছে। এই নথিকে রহস্যময় দাবি করে ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি অভিযোগ তুলেছেন।

একজন নাগরিক কী কী কারণে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন এটাও যিনি জানেন না, এমন একজন ব্যক্তির কেবল অনির্বাচিত একটি সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ ব্যাপারে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে দেশের জনগণ তাঁর জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করছেন। দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছেন, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের তিনটি পাতা এবং ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কী বিচিত্র এই সরকার! কী দুর্বল তাদের অপকৌশল !

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার একটি নথি দেখিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে ‘প্রলাপ বকা এবং অপপ্রচার’ অবিলম্বে বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তিনি বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকারবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এ প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে, তাঁকে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। কাজেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তাঁর কোনও কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন, তখনই দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জমা রাখার জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তাঁর পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তাতে কোনও আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরনের উদ্ভট ধারণাকে তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার রাজনৈতিক মূর্খতা। এটা উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘অবৈধ ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে তিনি (তারেক রহমান) ২০০৮ সালে লন্ডনে যান। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনও সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন আইন ২০০৪ -এর ১৭ ধারায় উল্লেখ আছে, ‘পাসপোর্ট অথবা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট কারও কাছে যাবে না। কেবল যিনি এটার(পাসপোর্ট) হোল্ডার তার কাছে যাবে। থার্ড পার্টি এটা রিটেন করতে পারবে না। সুতরাং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে দাবি করছেন এই পাসপোর্ট হাইকমিশনে দেয়া হয়েছে, তা রহস্যজনক এবং সন্দেহজনক।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের বক্তব্য এখানে স্পষ্ট ব্রিটিশ আইনের সেকশন ৭০ অনুসারে তারেক রহমানের পাসপোর্ট বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা নয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি/ টি এইচ

প্রকাশ :এপ্রিল ২৪, ২০১৮ ২:০৮ অপরাহ্ণ