নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জে এমপি সেলিম ওসমানের হাতে লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বন্দরে এক শিক্ষিককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশের দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন। বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত শ্যামল কান্তি ভক্ত। ন্যায়বিচার পাননি জানিয়ে ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো নাটক বলে তিনি দাবি করেছেন।
মামলার বরাত দিয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ২০১৪ সালের ২৪ বন্দর পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের চাকরি এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার জন্য তার কাছ থেকে দুই দফায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে এমপিওভুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেননি। এই ঘটনায় গত বছরের ২৭ জুলাই মোর্শেদা বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। আদালত বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। গত ১৭ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) হারুন অর রশিদ শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির চারটি ধারায় (১৬১/৪১৭/৪০৬/৪২০) অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তবে শ্যামল কান্তি ভক্তের দাবি, তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উচ্চ আদালতে চলমান মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তার আইনজীবী শাখাওয়াত হোসেন খান।
তিনি জানান, এ মামলায় তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করিয়ে জামিনের জন্য আবেদন করা হবে।
গত ১৩ মে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যানদীতে পিয়ার সাত্তার লফিত উচ্চ বিদ্যালয়ে ধর্মীয় অবমাননার কটূক্তির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশে শারীরিক নির্যাতন, কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত ১৪ জুলাই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, শিক্ষার্থী রিফাতকে মারধর ও শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পৃথক তিনজন বাদী নারায়ণগঞ্জ আদালতে তিনটি মামলার আবেদন করেন। আদালত ওই দিন বিকেলে শুনানি শেষে প্রথম দুটি মামলা খারিজ করে দেন। পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মোর্শেদা বেগমকে প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এই ঘটনায় হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এমপি সেলিম ওসমান ও অপু প্রধানকে দায়ী করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে মঙ্গলবার ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমান মঙ্গলবার সিএমএম আদালত থেকে জামিন পান।
দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ