২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৫২

মার্কিন ‘জঙ্গি তালিকা’য় ভারতীয় প্রবাসী বাঙালি সিদ্ধার্থ ধর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বাঙালি জঙ্গিকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করল আমেরিকা। আইএস-এর সিনিয়র কম্যান্ডার আবু রুমায়েশকে ওয়াশিংটন ‘গ্লোবাল টেররিজম লিস্ট’-এর অন্তর্ভুক্ত করল।

ব্রিটেন ছেড়ে সিরিয়ায় চলে যাওয়া রুমায়েশ আসলে সিদ্ধার্থ ধর। বাঙালি তথা ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক সিদ্ধার্থ ওরফে রুমায়েশকে জঙ্গি বেশে গোটা বিশ্ব প্রথম বার দেখেছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ব্রিটিশের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ জনকে মরুভূমির মাঝে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে— এমন একটি ভিডিও সে সময় প্রকাশ করেছিল আইএস। সেই ভিডিওতেই জঙ্গি হিসেবে প্রথম বার দেখা গিয়েছিল সিদ্ধার্থ ধরকে।

শুধু আবু রুমায়েশ নামে নয়, ‘নিউ জিহাদি জন’ নামেও পরিচিতি রয়েছে সিদ্ধার্থের। লন্ডনেই জন্ম, বড় হওয়া এবং পড়াশোনা প্রবাসী বাঙালি পরিবারের ছেলে সিদ্ধার্থ ধরের। কিন্তু পারিবারিক ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে সে নানা রকম জিহাদি কার্যকলাপে অংশ নিচ্ছিল বলে ব্রিটিশ পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের নজরও ছিল তার উপরে। ফলে অচিরেই গ্রেফতার হতে হয় সিদ্ধার্থকে। কিন্তু জামিন পাওয়ার পরে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে সিরিয়ায় পালিয়ে যায়। সেখানেই শুরু হয় পুরোদস্তুর সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ।

পাঁচ ‘ব্রিটিশ চর’কে খুন করার যে ভিডিও আইএস প্রকাশ করেছিল, সেই ভিডিওর অডিও ক্লিপটি প্রথমে শোনানো হয়েছিল সিদ্ধার্থের বোন কণিকাকে। তিনি গলা চিনে নিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন ওই কণ্ঠস্বর তাঁর দাদারই। তার পরে ভিডিওটিও দেখানো হয় কণিকাকে। আর বিশ্বাস করতে পারেননি কণিকা। তাঁর দাদা সিরিয়ায় গিয়ে আইএস কম্যান্ডার হয়ে উঠেছে, আগ্নেয়াস্ত্র দাদার সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে উঠেছে, মুখোশ পরে সে গণহত্যায় নেতৃত্ব দিচ্ছে— এমনটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল কণিকা ধরের পক্ষে। কণ্ঠস্বর এক রকম হলেও, মুখোশের আড়ালে আসলে অন্য কেউ, বিশ্বাস করতে চেয়েছিল সিদ্ধার্থের পরিবার। কিন্তু ব্রিটিশ প্রশাসন জানিয়েছিল, ওই জঙ্গি সিদ্ধার্থই।

এ বার আমেরিকাও একই কথা জানাল। আইএস-এর ভিডিওয় গণহত্যার নায়ক যে, সে মুখোশধারী সিদ্ধার্থ ধরই। জানাল মার্কিন বিদেশ দফতর। মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিদ্ধার্থ ধর ওরফে আবু রুমায়েশ ওরফে নিউ জেহাদি জনকে ‘গ্লোবাল টেররিজম লিস্ট’-এর অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বেলজিয়ান-মরোক্কান জঙ্গি আবদেলতিফ গাইনিকেও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা হয়েছে।

বর্তমানে সিরিয়ায় থাকা সিদ্ধার্থ দীর্ঘ সময় ইরাকে ছিল বলেও জানা গিয়েছে। উত্তর ইরাকের ইতিহাসিক শহর মসুল কয়েক মাস আগেও আইএস-এর শক্ত ঘাঁটি ছিল। সে সময় সিদ্ধার্থ মসুলেই ছিল বলে জানা গিয়েছে। ইরাকের সংখ্যালঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের গ্রামগুলিতে মাঝেমধ্যেই হানা দিত আইএস জঙ্গিরা। পুরুষদের তারা খুন করত। মহিলাদের তুলে নিয়ে গিয়ে যৌনদাসী বানাত। এ সব খবর আগেও সামনে এসেছে বহু বার। সিদ্ধার্থ ধর তেমন হানাদারিতেও নেতৃত্ব দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জঙ্গিদের কবল থেকে পালাতে সক্ষম হওয়া ইয়াজিদি কিশোরী নিহাদ বারাকতকে উদ্ধৃত করে ‘ইনডিপেন্ডেন্ট’ সে খবর জানিয়েছিল।

গ্লোবাল টেররিজম লিস্টের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে সিদ্ধার্থ ধর এবং আবদেললতিফ গাইনি। তাদের নামে যে সব সম্পত্তি রয়েছে, সে সবও বাজেয়াপ্ত হবে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৫, ২০১৮ ১২:৫৭ অপরাহ্ণ