২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৫৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রথম বৈঠক আজ, রয়েই গেছে শংকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

হামিদ হুসাইন, ৭১ বছর বয়সী মুসলিম রোহিঙ্গা কৃষক ১৯৯২ সালে প্রথম পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তিনি আগামী বছর মাতৃভূমিতে ফিরবেন। এ নিয়ে হামিদ দু’বার মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন। গত সেপ্টেম্বরে সংঘাতের পর হামিদ পালিয়ে ফের বাংলাদেশে আসেন। আর তার রাখাইনে ফেরা সম্ভব হচ্ছে সম্প্রতি প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায়।

গত ২৩ নভেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। হামিদদের ফেরানোর চুক্তি বাস্তবায়নে সোমবার মিয়ানমারের রাজধানী নাইপেদোতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

পালিয়ে আসাদের অন্যতম হামিদ হুসাইনের ভয়, শেষ পর্যন্ত এই প্রত্যাবাসন স্থায়ী হবে না। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের এই বাসিন্দা বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ আমাদের আশস্ত করেছেন যে, মিয়ানমার আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের পরিবেশ তৈরি করবে।’

হামিদ হুসাইন বলেন, ‘হয়তো আমরা ফিরব। কিন্তু, কোনো কিছুরই পরিবর্তন হবে না। আমাকে আবারো ফিরে আসতে হবে। অধিকার এবং নিরাপদে বসবাসের নিশ্চয়তা কখনই পূরণ হবে না।’ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। তাদের দাবি, এরা বাঙালি এবং বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে রোহিঙ্গারা দেশটিতে শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেরত আসারা মিয়ানমারের বাসিন্দা প্রমাণ দিতে পারলেই কেবল নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু, সর্বশেষ চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯২ সালে আসারা কিভাবে প্রমাণ দিয়ে নাগরিকত্ব পাবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এমন শংকার মধ্যেই সোমবার নাইপেদোতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক হতে যাচ্ছে। বৈঠকে দু’দেশের আমলারা উপস্থিত থাকবেন।

এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে দুই বাংলাদেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। তবে তাদের একজন নিজেও জানেন না প্রথম পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কিভাবে তাদের মিয়ানমারের বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘যেকোনো প্রত্যাবাসন জটিল এবং ঝামেলাপূর্ণ। রোহিঙ্গারাদের ফেরানোর পরিবেশ তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জের।’ অবশ্য তিনিই এই আলোচনায় ঢাকার ১৪ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দিবেন।

মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জো হতাই বলেছেন, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ফেরত আসারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, মিয়ানমার প্রথমে পালিয়ে যাওয়া ৫০০ হিন্দুকে প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব বাংলাদেশকে দিয়েছিল। বাংলাদেশ তাতে রাজি হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ৫০০ মুসলিমও রাখাইনে ফেরত আসার সুযোগ পাচ্ছেন। জো হতাই এও বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ের প্রত্যাবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ থেকে আমরা ভালো কিংবা মন্দ- দু’ধরনের অভিজ্ঞতা নিতে পারব।’

মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়ের সচিব মিয়ান্ট কাইং চলতি মাসের শুরুতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ২৩ জানুয়ারির পরে বাংলাদেশি ক্যাম্প থেকে দিনে কমপক্ষে ১৫০ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছে মিয়ানমার। তিনি আরো জানান, ফেরত নেওয়ার আগে তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা এবং সন্ত্রাসী কিনা যাচাই করা হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৫, ২০১৮ ১২:৪৬ অপরাহ্ণ