২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৪২

একগুচ্ছ কবিতা

শিল্পসাহিত্য ডেস্ক:

কবিতার ভিটে :

ভিটার কাহিনী মুখে কবুতর ওড়ে!

ঘুঘু চরে, ঘুরে ঘুরে আয়ুক্ষয়

জলছাপ কেঁপে ওঠে, স্মৃতির নোঙরে;

.কে যায়? কে যায় দূরে? ঘুঙুর মাড়িয়ে

ঝুমঝুম মরীচিকা পোড়ে

দাঁড়াও পথিক তুমি, তুলে নাও, নাও তাকে

তুমি যে ধ্রুবক তার, চাঁদে ভাসা সুর

ডাক দাও, পাবে জানি, নিশুতি রাতের বাঁকে

তবুও নিলে না? আহা!

কষ্টের চোখে নিদারুণ কালশিটে

বাঁশির সুরের ভাঁজে গড়িয়ে গড়িয়ে

ভেসে যায় জোৎস্নার প্লাবন

ওই দূরে কবুতর ওড়ে, ঘুঘু চরে

মায়াবী আলোয় ডোবে কবিতার ভিটে।

দূরত্ব:

বন্ধ ছিল, এখন খোলা। ফিরে যাবে? যাও

জীবন মানে মৃত্যু, মৃত্যু মানে কি?

জানতে চেয়ে চিবুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে

যেদিন সাঁতারের গল্প বলেছিলাম

সেদিন থেকে ঝোড়ো বাতাস আর বৃষ্টি

বিড়ালের কান্না প্রতিটি ভোরে। দরোজা দুটো বন্ধ অপেক্ষায় কাঁপছে

সাঁতারের গল্প আর অন্ধকার।

কাঁদে বাশুলির বাংলাদেশ

অভয়নগরে পূর্ণ তিথি রাত

তারাগুলো মৃদুলয় মান্দার ধ্বনির পাশে

জোছনার অণুছিদ্রে কুয়াশা প্রাচীর

বেদনার ভাটিতে বাঁশির ডাক

চারিদিক চুপচাপ, ঘোরহীন উন্মুক্ত উদাস।

মধ্যরাতের অচেনা হিমে

মেয়েটি আবেশ ভরে স্বামীর আদরে

নয়কুড়ি মার্বেলের রূপকল্প আঁকে

পেঁচার দূষিত শীষ নিরুচ্চার শীৎকারের বেশে

ঘরের দাওয়া থেকে ঘুমের উদরে

শৈশবের মতো নিঃশব্দে গড়ায়।

 

রাতের শেষ প্রহর

অভয়নগরে গ্রহণের কাল

পূর্ণ তিথি চাঁদে জমে অহল্যার বিষ

খেজুর রসের টুপটাপ ঝড়ে

ভেসে ওঠে পৃথিবীর যাবতীয় দুঃস্বপ্নের করাঘাত

ঘরের বিছানা ছেড়ে মেয়েটির নাভিনিম্ন ভূমি

যেন একাত্তুরের একটুকরো বাংলাদেশ

ফসলী মাঠের পাড়ে পড়ে থাকে

বাড়ে চক্রনেমি…

সরষে ফুলের মিহিসুরে ভোর হয়

নরম আলোয় জেগে ওঠে জনপদ

কোলাহল বাড়ে

মেয়েটির কাঁচুলির হুক থেকে উবে যায় সংক্ষুব্ধ শিশির

খোলা ঝিনুকের মতো রক্তাক্ত যোনির পাশে পিঁপড়ের সারি

লাভার করাত হয়ে পম্পাই নগরী থেকে নেমে আসা

সংখ্যাগুরুর বীর্যের মউ

লেপ্টে থাকে খটখটে মাটির ঢেলায়।

সূর্যের উত্তাপে ধীরে ধীরে জনশূন্য সময়ের কণা

মাটির ঢেলায় সুরেলা রঙিন প্রজাপতি ফুল

বাষ্পগন্ধ নিয়ে ভরে দেয় চারিদিক

তবু নির্জনে রোদন বাড়ে

গৃহকোণ ভরে যায় বাদুর বিলাপে

একক অপেক্ষা ছেড়ে সমষ্টির ভীড়ে চোখ তোলে

আঁধারের খোপ, খোঁজে আলোর ইশারা ঢেউ;

বাশুলির বাংলাদেশ আঁচল ছড়িয়ে কাঁদে

ভাঙে আওড় বাওড় থেকে জেগে ওঠা

তর্কাতীত বিশ্বাসের ভিত।

তেপান্তরের রূপকথা মোড়

তেপান্তরের রূপকথা মোড়ে জীবন ছড়িয়ে

চলে গেছি বহুদূর!

দিন ও রাত ছেড়ে বাতাসী প্লাবনে

ভেসে যেতে যেতে খুঁজি সুর ও শব্দের বুনন

ছায়ার গোড়ালি বেয়ে বুকসমান বিপন্নতার কাঁধে

যে মহাশ্বেতা ঘ্রাণ সীমানা পেরিয়ে কাছে আসে

তার তাল লয় ছিন্ন করা ঝোড়ো ঝংকারে

ভেঙে গেছে সেই কবে আকাঙ্ক্ষার পাটাতন।

মাছরাঙা ভোর স্তিমিত নগ্নতা ছেড়ে পিছু নিলে

রোদের ঝিলিকে বাড়ে আগামী সময়

যোজন যোজন তর্কের পর

নদীরাও ছেড়ে যায় মধ্যাহ্ন বিরতির ঘর।

আমিও ছেড়ে যাই

দূরাগত বোধের পাড়ে অবহেলায়

পড়ে থাকে দীর্ঘশ্বাসে বেড়ে ওঠা

অকাল আকাঙ্ক্ষার ঘোর।

হেমলক প্রেম :

শিশ্নের উজানে ভাসে মৃদঙ্গ মেঘের ডাক

স্তনের নুপুরে বাজে কাঁচুলির ঘুম!

একদিন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে তারা

হয় পরষ্পরগামী আর মোহময়।

তবু কেন তোমার শিশ্নের তাপে পোড়ে আমার বেহুলা ঘোর?

দখল পুর্নদখলের ইতিহাসে ডুবে তুমি হও তুমুল বিলাসী

আর আমি ঠক ঠক

কারণ, ঘেরাটোপ ঘিরে শত ভয়

নিয়তি নির্ধারিত মেনে আমি বাঁচি মুমূর্ষু বিলাপ নিয়ে

তুমি ওড়ো জিউস ডানায়

তোমার উত্থিত লিঙ্গে আমার নিঃশর্ত অভিবাদন

অথচ তুমি দুমড়ে মুচড়ে দাও ভরাট স্তনের কোমল কোরক

তারপরও ভাবো কুহিনুর হয়ে জ্বলবে আজীবন

চাও অসীম আগ্রাসী তোমার চাওয়ায় আমি থাকি লন্ডভন্ড

আরো চাও বাতাবি ব্যস্ততা ভুলে তোমার পায়েই সারাদিন ঘুর ঘুর।

আমি জ্বলবো ঠিকই, পোড়াবোও নিজেকে নিজের মতো

ফিনিক্স ডানায় উড়ে খুঁজে নেবো নিজেই

অরক্ষিত বিষধর এক হেমলক প্রেম।

বৃষ্টির ঘর

বসে আছি একখণ্ড মেঘের ভেতর

গতি নেই নিশ্চল নিথর

কাছাকাছি কেউ নেই…

ছিলো কাছে জোছনার পুর ভরা অনিদ্র আকাশ

চলে গেছে সেও কবে

ভেঙে গেছে বিহ্বল বৃষ্টির ঘর।

কেউ কি শেখাবে?

দেয়ালে দেয়াল চাপা আগুনের তাপ

নাভিমূল ঘিরে থাকে সম্মোহ, সন্তাপ

কি করি? কীভাবে হাঁটি বায়ুরুদ্ধ পথ?

কেউ কি শেখাবে? কীভাবে ভাঙতে হয়

ডুবোজলে ভেসে থাকা বাল্মিকী শপথ?

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১৫, ২০১৭ ২:৪৫ অপরাহ্ণ