২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:০৩

মোবাইল কোম্পানিগুলোর ৮৮৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিম রিপ্লেসমেন্টের নামে নতুন সিম বিক্রি করে ৪টি মোবাইল কোম্পানি ৮৮৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে গ্রামীণফোন ৩৭৮ কোটি টাকা। এ রাজস্ব পরিশোধের তাগাদা দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনস্থ বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূসক (এলটিইউ-ভ্যাট) সোমবার পৃথক ৪টি চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করেছে।
সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটরগুলো রিপ্লেসমেন্ট সিমের আদলে নতুন সিমকার্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে কম রাজস্ব পরিশোধ করছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করতে এলটিইউ-ভ্যাটের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরাও ছিল। এ কমিটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত দাখিলপত্রে জমা দেয়া গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল ও বাংলালিংকের রিপ্লেসমেন্ট সিমের তথ্য যাচাই শুরু করে। এ কাজে সহযোগিতার জন্য সিম রিপ্লেসমেন্টের মাসভিত্তিক প্রমাণপত্র উপস্থাপনের অনুরোধ জানানো হলেও মোবাইল অপারেটর ও অ্যামটব একই বিষয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে বলে জানায়। পরবর্তী সময়ে পুনরায় সিম রিপ্লেসমেন্টের তথ্য চাওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে কোনো অপারেটরই জমা দেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দাখিলপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে সিম রিপ্লেসমেন্টের অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। শুনানির দিনক্ষণ ঠিক করেও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হননি। তাই রাজস্ব পরিশোধে সোমবার ৪টি মোবাইল অপারেটরের ঠিকানায় চূড়ান্ত দাবিনামা পাঠানো হয়েছে।
গ্রামীণফোন : ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত ভ্যাট কার্যালয়ে জমা দেয়া দাখিলপত্রে ১ কোটি ৬ লাখ ৩ হাজার ৩৫৮টি সিম রিপ্লেসমেন্টের তথ্য উল্লেখ করে গ্রামীণফোন। এসব সিমের বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক বাবদ ২৪০ কোটি টাকা এবং ভ্যাট বাবদ ১৩৮ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৩৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে দাবিনামা জারি করা হয়েছে।
বাংলালিংক : একই সময়ে বাংলালিংক ৪৫ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৭টি সিম রিপ্লেসমেন্ট করে। একই হিসাবে এ কোম্পানিকে ১৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রবি আজিয়াটা : একই সময়ে রবি আজিয়াটা ৭৫ লাখ ২৫ হাজার ৭৬৩টি সিম রিপ্লেসমেন্ট করে। একই হিসাবে এ কোম্পানিকে ২৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এয়ারটেল : একই সময়ে এয়ারটেল ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৬টি সিম রিপ্লেসমেন্ট করে। একই হিসাবে এ কোম্পানিকে ৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিয়মানুযায়ী মোবাইল অপারেটরগুলোকে প্রতিটি নতুন সিম বিক্রিতে সরকারকে ১০০ টাকা রাজস্ব পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ৬৩ টাকা এবং ভ্যাট ২৭ টাকা আছে। রিপ্লেসমেন্ট সিমে এ রাজস্ব দিতে হয় না।
সিম রিপ্লেসমেন্ট সংক্রান্ত ২০০৫ সালে জারি করা এনবিআরের এক ব্যাখ্যায় বলা আছে, মূল ক্রেতার সিম কার্ড হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে সিম কার্ড-রিম কার্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুনভাবে শুল্ক-কর দিতে হবে না। তবে মোবাইল অপারেটরগুলোকে এ ধরনের কার্ড বা পদ্ধতিগত প্রতিস্থাপনের তথ্যাদি সংরক্ষণ করতে হবে। এবং প্রতি মাসে দাখিলপত্র জমার সময় এসব তথ্য সংযুক্ত করে ভ্যাট কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এলটিইউ সূত্র জানায়, চূড়ান্ত দাবিনামা অনুযায়ী মোবাইল অপারেটরগুলো বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ ও আপিল করতে তিন মাস সময় পাবে। আপিল করতে হলে আগে বকেয়া রাজস্বের ১০ শতাংশ জমা দিতে হবে। যদি কোম্পানিগুলো রাজস্ব পরিশোধ বা আপিল না করে তাহলে আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১১ মেয়াদের সিম রিপ্লেসমেন্ট ইস্যুতে ৫টি মোবাইল অপারেটরের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার দাবিনামা জারি করে এলটিইউ-ভ্যাট। বর্তমানে এটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। এদিকে বাংলাদেশ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (অ্যামটব) সেক্রেটারি জেনারেল টিআইএম নুরুল কবির বলেছেন, রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানের দাবি অসামঞ্জ্যপূর্ণ এবং এটা বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক বার্তা দেবে। সরকার এবং বিনিয়োগকারীরা যখন ফোরজি চালুর পরিকল্পনা করছে, তখন এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাবে এবং রাজস্ব আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :নভেম্বর ২১, ২০১৭ ৩:১৭ অপরাহ্ণ