নিজস্ব প্রতিবেদক:
তৃতীয় ধাপে সরকারিকরণের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সারা দেশে আড়াই হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের ঈদ আনন্দ ফিকে হয়ে এসেছে। চার বছর আগে ওই শিক্ষকদের স্কুলগুলো সরকারিকরণ হলেও এখনো শিক্ষকদের চূড়ান্ত গেজেট না হওয়ায় বিনা বেতনে পাঠদান করাচ্ছেন তারা। দীর্ঘদিন যাবত বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবন করছেন এসব শিক্ষক। অভাব অনটনে জর্জরিত এখন সেসব শিক্ষকের জীবন। ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালগুলো সরকারি হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে আনন্দিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষকরা বাড়ি ফিরলেও সে আনন্দ এখন কষ্টে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের ভালুকার রয়েছেন ১২ শিক্ষক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে করুণ অবস্থার কথা। জানা গেছে, ভালুকার মতো সারাদেশে ২৫৯৫ জন শিক্ষক বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছেন গত চার বছর ধরে। তিন ধাপে দেশের সব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় তৃতীয় ধাপের কাজ আটকে গেছে। তৃতীয় ধাপে সারাদেশের ৫১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কবে পাবেন বেতন সে নিশ্চয়তা এখনো পাচ্ছেন না তারা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তৃতীয় ধাপের ৫১৯টি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে চারজন করে মোট ২৫৯৫ জন শিক্ষক। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে তাদের বেতন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো এক টাকাও পাননি তারা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র অনুযায়ী তৃতীয় ধাপের ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সরকারিকরণ করা হবে বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু প্রায় পৌনে তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও হচ্ছে না এসব বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত সরকারিকরণ বা শিক্ষকদের বেতন ভাতা। জানা যায়, তৃতীয় ধাপের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৯৬০টি বিদ্যালয় সরকারিকরণ হওয়ার কথা থাকলে পরবর্তী সময়ে চারটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৮৮০টির মতো বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মুহাম্মদ হিরুজ্জামান স্বাক্ষরিক একটি গেজেটে তৃতীয় ধাপের জাতীয়করণকৃত ৫১৯টি বিদ্যালয়ের ২৫৯৫ জন শিক্ষকের রাজস্বখাতে পদ সৃজন সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি সেই গেজেট কোনো আলোর মুখ দেখিনি। শিক্ষকরা জানান, তৃতীয় ধাপে সরকারিকরণ স্কুলগুলো মূলত কমিউনিটি স্কুল। এগুলো এনজিও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের অধীনে ছিল। আগে অল্প হলেও বেতন পাওয়া যেত। সরকারিকরণের পর বেতনভাতাই বন্ধ হয়ে গেছে। ভালুকা মাহার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার বলেন, ‘খুবই কষ্টে আছি। সরকারিকরণের পর প্রায় তিন বছর ধরে বেতন নাই। পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছি। নানা জায়গায় খোঁজ নিই। সবাই বলে এইতো হবে। কিন্তু হচ্ছে না। আর পারছি না। আর কতদিন এভাবে দিনাপাত করবো। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পুলক রঞ্জন সাহা মুঠোফোনে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সবকিছু চূড়ান্ত। আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে গেজেট প্রকাশ করা হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ