আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দালালের মাধ্যমে ইউরোপে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে এমন অভিবাসীদের নিয়ে রীতিমতো চাপের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ইউরোপের দেশগুলো থেকে ৯৩ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর কঠিন শর্ত দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের ভিসা প্রক্রিয়াও কড়াকড়ি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ব্রিটেন প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ বসবাসের অভিযোগ তুলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তুরস্ক অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সার্বক্ষণিক চাপ দিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আপাতত এই বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নভাবে আলোচনা চালানো হচ্ছে। তবে আগের মতো অবৈধভাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢালাও বসবাসের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে খুব দ্রুতই। কারণ, অবৈধ এই অভিবাসীদের জন্য বৈধ অভিবাসী, পর্যটনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশিরাও সংকটে পড়ছেন। জানা যায়, নানাভাবে ইউরোপে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছে। গত বছরের শুরু থেকে ২৮ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে। অবৈধ এসব লোকজনকে দ্রুত ফিরিয়ে আনা না হলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করার কথা জানিয়েছে ইইউ। যদিও ইইউর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো তালিকা এখনো পায়নি বাংলাদেশ।
আবার ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যানের বিষয়েও আপত্তি আছে বাংলাদেশের। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত আট বছরের মধ্যে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ২১ হাজার ৪৬০ জন বাংলাদেশি ইউরোপ গেছেন। অথচ ২০১৪ সালে ওই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৩৫ জন। ২০১৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ৯ হাজার ৪৯০ জন। ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে ওই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭ হাজার ৮৫ জন, ৮ হাজার ৮৭০ জন, ৯ হাজার ৭৭৫ জন, ১১ হাজার ২৬০ জন ও ১৫ হাজার ৩৬০ জন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ে কাজ করা সংগঠন ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত উত্তর আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন সাত হাজার ৮৯৯ বাংলাদেশি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সর্বশেষ চলতি মাসের শুরুতে ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের তালিকা বাংলাদেশকে দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে আটক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ফিরতে বাধ্য করা হবে। অবশ্য এটাকে একটি ভিন্ন মাত্রা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশি কূটনীতিকরা। জানা যায়, মানব পাচারকারীরা মূলত সিরিয়ায় শরণার্থী পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে ইউরোপ যেতে প্রলুব্ধ করে। লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়া মানব পাচারের জনপ্রিয় রুট হয়ে ওঠে। পাশাপাশি তুরস্ক দিয়েও প্রবেশের চেষ্টা শুরু করে অনেকে। কিন্তু গত বছর তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তি সই করায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের তুরস্কে অবস্থান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কঠোর নজরদারিও শুরু হয়েছে। তুরস্ক থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকী বলেন, সিরিয়া, ইরাক, ইরানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আসা বাংলাদেশের হাজার দুয়েক লোক তুরস্কে আটকা পড়েছেন। তাদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বৈধভাবেই কাজ করতেন। মানব পাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে তারা ইউরোপ পাড়ি দিতে তুরস্কে এসে আটকা পড়ছেন। সেসব লোক দালালদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, গত বছরের শেষ নাগাদ ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক অভিযোগ তুলেছিলেন, প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধভাবে ব্রিটেনে রয়েছেন। তাদের জোর করে নয়, বরং মানবিক পদ্ধতিতে ফেরত পাঠাতে চায় ব্রিটেন। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অবশ্য ঢাকার পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, ব্রিটেন যে ২০ হাজার বাংলাদেশিকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তার মধ্যে অন্তত ১৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। যারা ব্রিটেনে পড়তে গিয়ে কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে বিপদে পড়েন।
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ