২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৫২

ভোলার দুর্গম চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত শিশুরা

এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা ॥

যে বয়সে বইপত্র নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা, সে বয়েসে নদীতে মাছ ধরে বাবা মাকে সহযোগিতা করছে শিশু রহিম (১০)। নিজ এলাকয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সে পড়ালেখা করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের প্রয়োজনে তাকে শ্রমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। তার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার ফারুকি গ্রামে। রহিমের মতো চরফ্যাশনের ২৫ টি দুর্গম চরাঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভোলার চরফ্যাশনের দুর্গম জনবসতিপূর্ণ চরাঞ্চলগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকা, অভিবাবকদের অর্থনৈতিক সংকট ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে চরাঞ্চলের কোমলমতি শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার যে সকল চরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে নিয়মিত পাঠদান হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন এনজিওর শিক্ষা কার্য্যক্রম চলালেও দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে এ কার্য্যক্রম চালাচ্ছে না। ফলে চরাঞ্চলের শিশুরা ইচ্ছে থাকা সত্বেও বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।
খোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় জনবসতিপূর্ণ চর রয়েছে প্রায় অর্ধশত। এগুলোর মধ্যে কুকরি-মুকরি, চর কচ্ছপিয়া, চর পাতিলা, ঢালচর, চর মনোহর, সিকদার চর, চর লিউলিন, চরফারুকী, চর হাসিনা, লক্ষির চর চরফ্যাশনের মূল-ভূখন্ড থেকে একেবারই বিচ্ছিন্ন। এসব চরের অধিকাংশ এলাকাতেই প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। যে সব চরে বিদ্যালয় রয়েছে তাও প্রয়োজনের তুলনাই খুবই কম।
চরের সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির আলম, ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের সাথে কথা বললে তারা জানান, চরে বিদ্যালয় না থাকা, শিক্ষক সংকট, দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতিই শিশুদের বাধ্যতামুলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার মূল কারণ।
চর ফারুকির বাসিন্দা রফিকুল, জসিম ব্যাপারী বলেন, পোলা পাইনগোরে পড়াইতে ইচ্ছা করে কিন্তু স্কুল নাই। সরকার আমাগো লাগ্যইগা কিছু করে নাই। একই এলাকার রহিম মাঝি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকার আইয়ে সরকার যায়, আমাগো ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। এহানে সরকার যদি একটা স্কুল দেয়, তাহলে আমাগো পোলাইনেরে পড়াইতে পারমু। এ চরে প্রায় ৫ শতাধিক স্কুল গমন উপযোগী শিশু থাকলেও এখানে স্কুল নেই।
এ ব্যাপারে চরফ্যাশন উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো: রেজাউল করিম বলেন, চরফ্যাশনের অধিকাংশ চর দুর্গম এবং বিদ্যালয় বর্হিভূত শিশুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জালাল আহম্মেদ বলেন, বিদ্যালয় বর্হিভূত শিশু সংখ্যা কম, তবে গত কয়েক বছরে প্রায় ৫ হাজারের মতো শিশু ঝরে পড়ছে।

দৈনিক দেশজনতা/এমএম

 

 

প্রকাশ :জুলাই ৭, ২০১৭ ২:৫৯ অপরাহ্ণ