২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৪৪

পরিবারের কেউ নেই জিহাদের

রাঙামাটি প্রতিবেদক:
পরিবারের স্বজন আর পরিবারের কেউ নেই জিহাদের। ওদের পরিবারে ছিল চার জন। ভাগ্যক্রমে শুধু বেঁচে গেছে সে। বাবা, মা, বোন আর ফিরবে না কখনও। তারা চলে গেছে না ফেরার দেশে। পাহাড় ধসে মাটির চাপায় প্রাণ গেছে ওই তিন জনের। মাটিতে বিলীন হয়ে গেছে পুরো বসতঘর। কী হবে তার ভবিষ্যৎ, কোথায় যাবে, কী করবে- এখন কিছুই বলতে পারছে না জিহাদ।
দশম শ্রেণির ছাত্র জিহাদ। বয়স পনের। পড়ালেখা করে রাঙামাটি শহরের বনরূপা আল-আমিন মাদ্রাসায়। রোববার রাঙামাটি সদর হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, সেখানে জিহাদ চিকিৎসাধীন। চিকিৎসার জন্য জায়গা হয়েছে ফ্লোরে। হাসপাতালের ৩ নম্বর মেডিকেল অফিসারের রুমে। সেখানে মেঝের ওপর বেডে এখনও কাতরাচ্ছে স্বজনহারা জিহাদ। নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছোবলে কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত পা দুটি অবশ তার। কত আর কাঁদবে। শুকিয়ে গেছে চোখের জলও। এখন নির্বাক প্রায়। অস্থির মানসিক ভারসাম্য।
১৩ জুন (মঙ্গলবার) রাঙামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছেন, জিহাদের বাবা জিয়াউর রহমান (২৮), মা সবুরা খাতুন (২৫) ও বোন বৃষ্টি আক্তার (৮)। বাবা চাকরি করতেন আনসারে। তাদের বসতঘর ছিল শহরের ভেদভেদীর পশ্চিম মুসলিমপাড়ায়। ওইদিন সকাল প্রায় ১১টার দিকে তাদের ওপর আঘাত হানে নিষ্ঠুর প্রকৃতি। তখন হঠাৎ পাশের পাহাড় থেকে ধসে পড়ে মাটি। তাৎক্ষণিক মাটির চাপায় বিলীন হয়ে যায় তাদের বসতঘর। এতে জিহাদের চোখের সামনেই করুণ মৃত্যু ঘটে বাবা, মা, বোনের।
এমন ভয়ানক মুহূর্তের বর্ণনা দিতেই শিউরে ওঠে জিহাদ। বলে, ওই সময় ঘর হতে বেরুতে প্রাণপন চেষ্টা করে সে। কিন্তু ধসে পড়া মাটিতে নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত চাপা পড়ায় আটকে যায়। ততক্ষণেই রুদ্ধ ঘরে বিলীন হয়ে সাড়া-শব্দহীন হয়ে পড়েন বাবা, মা আর বোন। আশেপাশে পাহাড় ধসের গোঙানি আর মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল। প্রাণ রক্ষায় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকে জিহাদ। কিছুক্ষণের মধ্যে দৃষ্টিতে মেলে, এগিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। তারা তাৎক্ষণিক জিহাদকে উদ্ধার করে নিয়ে যান রাঙামাটি সদর হাসপাতাল। এরপর দুর্ঘটনার স্থল হতে একে একে উদ্ধার করা হয় জিহাদের বাবা, মা ও বোনের নি®প্রাণ দেহ।
রোববার হাসপাতালে দেখা যায়, জিহাদের পাশে তার চাচাতো লিজা আক্তার, সহপাঠী মো. ইমাম হোসেন, আবু রায়হান, মিনহাজুলসহ আপন জনদের। তাড়াতাড়ি সারাতে জিহাদকে যথাসাধ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
লিজা জানান, খবর পেয়ে ওইদিনই তিনি ছুটে যান রাঙামাটি। চাকরির কারণে থাকেন চট্টগ্রাম। নিজবাড়ি বরিশালে। জিহাদের বাবা জিয়াউর রহমান তার বাবা নুর রশীদ খানের ছোট ভাই। জিহাদ মাটির চাপায় গুরুতর আহত। সুস্থ হলে তাকে কোথায় কী করব তখন দেখব।
এদিকে জিহাদের মতো আহত অনেকে এখন চিকিৎসাধীন রাঙামাটি সদর হাসপাতালে। আঘাত আর স্বজন হারানোর বেদনায় হাসপাতাল বেডে কাতরাচ্ছেন তারা। ওইদিনের পাহাড় ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. সহীদ তালুকদার বলেন, মাটির চাপায় আহত ৯৮ জনকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে অবস্থার অবনতি ঘটায় জিসান নামে দেড় বছর বয়সী এক শিশুকে চট্টগ্রাম রেফার করা হলে নেয়ার পথে শনিবার রাতে মারা যায় শিশুটি। শিশুটির বাবা বজলুর রহমান ভেদভেদীর পূর্ব মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা।
এছাড়া পাহাড় ধসে আহত শহরের শিমুলতলীর বাসিন্দা ও অটোরিকশা চালক মো. নবী (৫০) ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন, রাঙামাটি অটোরিকশা চালক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান মহসীন রোমান।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

প্রকাশ :জুন ১৯, ২০১৭ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ