স্বাস্থ্য ডেস্ক:
ভয় পাবেন না, ঠা ঠা রোদের কথা হচ্ছে না। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে প্রবল রোদে না বেরোনোই ভাল। বা বেরোলেও ছাতা–টুপি–সানস্ক্রিন ইত্যাদির আড়াল নেয়া উচিত। কিন্তু সকাল হতে না হতেই কালো হওয়ার ভয়ে, অকালে বলিরেখা পড়ার ভয়ে এ সবের ছত্রছায়ায় ঢুকে পড়লে কপালে দুঃখ আছে৷ বা আরামপ্রিয় হয়ে রোদকে একেবারে বর্জন করলেও ঝামেলা। বিশেষ করে মেয়েদের। সাম্প্রতিক গবেষণা অন্তত তাই বলছে। কারণ চামড়ায় পর্যাপ্ত রোদ পড়লে তৈরি হয় ভিটামিন ডি, শরীরে যার বিপুল প্রয়োজন।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সুদীপ বসু বলেন, ‘আমাদের মতো রোদের প্রাচুর্যের দেশে ভিটামিন ডি–কে নিয়ে কোনও চাপ ছিল না আগে। কিন্তু ইদানীং কমবয়সী নারী–পুরুষের মধ্যে ব্যথাবেদনার প্রকোপ খুব বেড়ে যাওয়ায় সামনে আসতে লাগল শরীরে এর প্রবল অভাবের খবর, বিশেষ করে বদ্ধ ঘরে যাদের কাজকারবার সীমাবদ্ধ। ক্রমে জানা গেল, শুধু ব্যথা নয়, এর অভাবে হতে পারে আরও নানান অসুখ। মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভসঞ্চারের আগে, গর্ভাবস্থায় ও ঋতুবন্ধের পরে শরীরে ভিটামিন ডি সঠিক মাত্রায় না থাকলে প্রচুর ঝামেলা হতে পারে।’
ভিটামিন ডি–র গুরুত্ব
শরীরে প্রজেস্টেরোন হরমোনের বাড়বৃদ্ধির মূলে ভিটামিন ডি–র ভূমিকা আছে। কাজেই কম বয়স থেকে শরীরে এর অভাব হলে এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে, গর্ভসঞ্চারে অসুবিধে হতে পারে। আগে এই সমস্যা দেখা যেত ঠাণ্ডার দেশে। আজকাল আমাদের দেশেও হচ্ছে। কারণ সৌন্দর্যের খাতিরে নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউই আজকাল রোদে বেরোন না। বা বেরোলেও এত ঢ়াকা–চাপা নেন যে তা ভেদ করে রোদের উপকার শরীরে প্রবেশ করতে পারে না।
গর্ভাবস্থায় শরীরে ভিটামিন ডি–র পরিমাণ ঠিক থাকা জরুরি। না হলে রক্তাল্পতা হতে পারে, যা মা ও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। তা ছাড়া এই সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে। ভিটামিন ডি ঠিক মাত্রায় না থাকলে ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খাইয়ে ও সাপ্লিমেন্ট দিয়েও সেই চাহিদা পূরণ করা যায় না। কারণ ভিটামিন ডি–এর সঙ্গত না পেলে ক্যালসিয়াম ভাল করে শোষিত হতে পারে না। হাড় নরম হতে শুরু করে। স্বাস্থ্যহানী হয় অকালে। ভিটামিন ডি–র অভাব হলে স্বাস্থ্যে, ত্বকে, চুলে, চেহারায় তার প্রভাব পড়ে৷ কম বয়সেই বুড়োটে লাগে। হাড় পাতলা হতে থাকে। যার হাত ধরে সূত্রপাত হয় প্রবল ব্যথাবেদনার। ক্লান্তি বাড়ে।
ঋতুবন্ধের পর স্ত্রী হরমোনের অভাবে হাড় এমনিই একটু নরম হতে থাকে, রুক্ষ হয় ত্বক–চুল, তার সঙ্গে ভিটামিন ডি–এর অভাব যুক্ত হলে বিপদ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। ব্যথাবেদনার পাশাপাশি কথায় কথায় হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সময় স্বাভাবিক ভাবে যে মেজাজের একটু ওঠা–পড়া হয়, তা-ও বাড়াবাড়ির আকার নিতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে সকাল ৭টা থেকে ৯টার রোদ এক ঘণ্টা শরীরে লাগালে সব দিক বজায় থাকে। সকালে না পারলে বেলা ১০টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে ১৫–২০ মিনিট লাগান। কালো হওয়ার ভয় থাকলে দু’পায়ে লাগান সরাসরি। একটু বেশি সময় ধরে।
খাবার ও সাপ্লিমেন্ট
সকালে ঘণ্টাখানেক বা বেলায় ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকা সম্ভব না হলে, বা হলেও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার কিছুটা খান৷ তবে এই ভিটামিনটি যেহেতু চর্বিতে দ্রবীভূত হয়, তার উৎস প্রায়শই হাই ক্যালোরি খাবার৷ যেমন তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, খাসি বা গরুর মাংস, দুধ ও দুধের খাবার৷ মাশরুম বা ভিটামিন ডি মেশানো ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল, পাউরুটি, সয়াবিনের দুধ বা কমলালেবুর রস খেতে পারেন৷ খেতে পারেন মুরগির বুকের অংশের মাংস বা শুয়োরের মাংস৷
খাবার খেয়ে ও রোদ লাগিয়ে ঘাটতি পূরণ না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো সাপ্লিমেন্ট খান৷ ৮–১২ সপ্তাহ খেলেই মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভাল হতে থাকে৷ কমে অন্যান্য সমস্যার প্রকোপ৷
উপসংহার
আলাদা করে রোদে বসার সময় না হলে সকাল ৭–৯ টার মধ্যে ঘণ্টাখানেক খোলা জায়গায় মর্নিং ওয়াক বা বাজারহাট করুন৷ শীত–গ্রীষ্ম–বর্ষা বারো মাস এই সময় খোলা জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন৷ কালো হওয়া, বলিরেখা পড়া ইত্যাদি ঝামেলাও হবে না, ভিটামিন ডি–ও থাকবে টইটম্বুর হয়ে৷