২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:২৪

গান আর গিটারে ১১৮ পার

রকমারি ডেস্ক:
এখনও তার কাঁপা কাঁপা হাতে সুর ওঠে গিটারে। গিটারের সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন কেচুয়া লোকগীতি। আজকাল কানে শুনতে না পেলেও উৎসাহে ভাটা পড়েনি। তিনি বলিভিয়ার একশো-পার তরুণ প্রাণ জুলিয়া ফ্লোরেস কল‌্‌কে। সম্ভবত এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ।

সরকারি খাতায় তার জন্ম ১৯০০ সালের ২৬ অক্টোবর। হিসেব কষলে বয়স দাঁড়ায়, ১১৭ বছর ১০ মাস। এ বছরের গোড়ায় বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ নাবি তাজিমা মারা যান। জাপানের বাসিন্দা নাবি জন্মেছিলেন ১৯০০ সালের ৪ অাগস্ট। তার মৃত্যুর পরে জুলিয়াই এখন প্রবীণতমের মুকুটের দাবিদার।

তবে গিনেস বুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলিয়ার পক্ষ থেকে কোনও আবেদনপত্র তারা পাননি।

বিশ্ব রেকর্ড গড়তে চলা মানুষটির অবশ্য সে-সবে ভ্রূক্ষেপ নেই। বলিভিয়ার পাহাড়ে পাহাড়ে বেড়ে ওঠা ছটফটে জুলিয়া গিনেস বুকের নামই শোনেননি কোনও দিন। সাকাবার খনি এলাকায় জন্ম। ছোটবেলায় ছাগল আর ভেড়া চরাতেন। কিশোরী যখন, ফল বেচে পেট চালিয়েছেন। আজ পোষা কুকুর, বিড়াল আর মুরগিগুলোর সঙ্গে দিব্যি সময় কেটে যায়। এখন সঙ্গী বলতে ৬৫ বছরের সম্পর্কিত এক নাতনি।

তিনি বললেন, হাসি-ঠাট্টায় জীবনের সব ধাক্কা সামলেছেন জুলিয়া। এখনও নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া সারেন। এটাই বোধ হয় দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র। তবে ভালো কেক দেখলে লোভ সামলাতে পারেন না আজও।

মেঠো বাড়ির দাওয়ায় বসে কেকে আঙুলে ডুবিয়ে চাটছিলেন জুলিয়া। দূর দেশ থেকে আসা সাংবাদিকরা আকার-ইঙ্গিতে সাক্ষাৎকারের কথা জানালে ফোকলা হেসে বললেন, আগে বলবে তো। তাহলে গানগুলো সব ঝালিয়ে রাখতাম। সাকাবার মেয়রের মতে, জুলিয়া ‘জীবন্ত ঐতিহ্য’।

প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা জুলিয়ার মেঠো বাড়িতে ইটের দেয়াল তুলে দিয়েছে। শৌচাগার সারিয়ে তাতে হাঁটা চলার সুবিধার জন্য হাতলও লাগিয়ে দিয়েছে।

দুই বিশ্বযুদ্ধ-পার এই সুদীর্ঘ জীবনে কী না দেখেছেন জুলিয়া। বলিভিয়ায় বিপ্লব থেকে লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতা। চোখের সামনেই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামটা বাড়তে বাড়তে আজ জমজমাট সাকাবা শহর। এক সময়ে যেখানে মেরেকেটে হাজার তিনেক লোক থাকত। এখন তা বাড়তে বাড়তে দুই লাখ ছুঁইছুঁই। তবে জুলিয়ার এই দীর্ঘ জীবনে খানিকটা বিস্মিত গবেষকরা।

জাতিসংঘের এক হিসাব বলছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে বলিভিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি!

বাড়ির উঠানে পাথরে খোদাই করা মূর্তির মতো বসেছিলেন জুলিয়া। মাঝে মাঝে উঠে গিয়ে আদর করছিলেন পোষা প্রাণেদের। বছর খানেক আগে পড়ে গিয়ে পিঠে চোট পান। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না বৃদ্ধা। হাসতে হাসতেই তাদের ভুল প্রমাণ করেছেন জুলিয়া।-আনন্দবাজার

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮ ২:৩৯ অপরাহ্ণ