২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৪৭

জেনে নেই ডিমেনসিয়া রোগের কিছু লক্ষণ

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

আলঝেইমার্স’ মস্তিস্কের এক ধরনের রোগ, এর ফলে রোগী কিছু মনে রাখতে পারেন না। এটা ‘ডিমেনসিয়া’ নামেও পরিচিত। অনেক সময় কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এই রোগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ ক্ষেত্র বিশেষে এতটাই ধীরে ধীরে হয়ে থাকে যে, শুরুর দিকে অনেক সময়ই তা ধরা পড়ে না। কারণ, এই রোগের লক্ষণ অন্যান্য অসুস্থতার মত না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে আনুমানিক সাড়ে ৮ লাখ মানুষ সাধারণ ধরনের ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু, কথা হচ্ছে আপনি কীভাবে সনাক্ত করবেন যে, আপনার বা পরিবারের কেউ আলঝেইমার্সে আক্রান্ত?

 কিছু লক্ষণ তো অবশ্যই আছে, যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন, আলঝেইমার্স। আসুন আজ আমরা জেনে নেই আলঝেইমার্সের কিছু লক্ষণ।

এটা সব সময় মনে রাখবেন যে, এটি কেবল মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় ভুলে যাওয়া নয়, আলঝেইমার্স তার চেয়েও বেশি কিছু। কখনো কখনো কারো নাম ভুলে যাওয়া কিংবা জিনিসপত্র কোথায় রেখেছেন সেটিও ভুলে যাওযার ঘটনা ঘটতে পারে।

আবার ভুলে যাওয়া বার্ধক্যের সাধারণ একটি অংশ। কিন্তু, সেগুলো নিশ্চিতভাবে আলঝেইমার্স বা ডিমেনসিয়ার কোনো ফর্মের লক্ষণ নয়। অথবা এটি কেবল ছোট ছোট জিনিস হারানোর মামুলি বিষয় নয়।

স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া এই রোগের প্রথম লক্ষণ। শর্ট-টার্ম মেমোরি বা স্বল্পমেয়াদে স্মৃতি-বিভ্রাট। ১০ মিনিট আগের ঘটনাও লোকে ভুলে যায় কিংবা কিছুক্ষণ আগের কথা-বার্তাও ভুলে যায়।

স্মৃতিশক্তি সমস্যা মানুষকে পুনরাবৃত্তির কিংবা সম্প্রতি ঘটা কোনো ঘটনার সম্পর্কে মনে করতে দেয় না। অথবা নিত্য-দিনকার কোনো কাজ যেমন: রান্নার রেসিপি বা ব্যাংক কার্ডের তথ্য ভুলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

চা বানানোর মাধ্যমে আলঝেইমার্স বুঝা যেতে পারে: সাধারণত প্রতিদিনকার কাজ-কর্মেও আলঝেইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ বোঝা যেতে পারে। এক কাপ চা বানানো খুব জটিল কিছু নয় এবং সেটার জন্য বিশেষ কিছু শিখতেও হয় না। কিন্তু, আলঝেইমার্স এটিকে খুবই কঠিন বিষয়ে পরিণত করতে পারে। কেন না পরবর্তীতে কি করতে হবে সেটি ভুলে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন আলঝেইমার্স আক্রান্তরা।

এই অবস্থায় পরিবর্তনগুলো খুব ছোট ছোট হতে পারে। কিন্তু, তা দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি হয়ত অনুধাবন করতে পারেন, ফোন ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে কিংবা ওষুধ খাওয়ার কথা ভুলে গেছেন। তাদের কথা-বার্তা এবং ভাষার প্রয়োগে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক শব্দ খুঁজে পেতেও তাদের অসুবিধায় পড়তে হয়।

আপনি কোথায়? কিংবা সেখানে আপনি কেন? ভুলে গিয়ে এমন প্রশ্নে কনফিউজড হওয়া আরেকটি সাধারণ ধরনের সংকেত। একজন একেবারে ভুলে যেতে পারে কোথাও যাওয়ার কারণ, বিশেষ করে অপরিচিত এলাকায় এবং বাড়িতেও সেটি ঘটতে পারে।

অনেক সময় আলঝেইমার্সে আক্রান্ত রোগীরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাওয়ার সময় ভুল ফ্লোরে চলে যেতে পারেন। এমনকি অন্য কোনো রুমেও চলে যেতে পারেন। কখনো দিন বা মাস নিয়েও কনফিউশন তৈরি হতে পারে।

মন-মেজাজ পরিবর্তন: উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলো কারো মধ্যে দেখা গেলে তার মধ্যে মুড বা আচরণ পরিবর্তনের উপসর্গও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আলঝেইমার্সে আক্রান্তরা সহজেই আপসেট কিংবা বিরক্ত হন, প্রায়ই হতাশা দেখা দেয় এবং আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এর ফলে দৈনন্দিন কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে এবং নতুন কোনো কাজের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে উঠতে পারে। তারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন সব সময়।

আলঝেইমার্স সোসাইটির ক্যাথরিন স্মিথ বলেন, ‘ডিমেনসিয়া বার্ধক্যের কোনো স্বাভাবিক দিক নয়, এটি মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ। এটি কেবল বয়স্ক মানুষদের আক্রান্ত করে তেমনটি নয়।’

তিনি জানান, ব্রিটেনে ৬৫ বছরের কম বয়সী ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ডিমেনসিয়াতে ভুগছেন। এদের প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। কিন্তু, অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারেন যখন কিছু একটা গোলমেলে ঠেকে।

ডিমেনসিয়া নিয়ে বহুবছর ভালোভাবে বাঁচা সম্ভব এবং এই রোগ নির্ণয়ের ফলে আপনার জীবন রাতারাতি পাল্টে যাবে না।

তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে রোগী নিজেই। কারণ, আলঝেইমার্স রোগের বিষয়ে সামাজিক কুসংস্কার রয়েছে। যার ফলে আনেকেই এই রোগ প্রকাশ পেলে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় থাকেন। তাই কাউকে এমন কি চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলতে চান না।

এই সমস্যাকে কুসংস্কার না ভেবে অন্য সকল রোগের মতোই একটা রোগ হিসেবে মেনে নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কথা বলুন। অথবা আপনি রোগী না হয়ে যদি পরিবারের অন্য কেউ হয়, তাহলে অবশ্যই তাকে বুঝিয়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।

দৈনিক দেশজন /এন এইচ

প্রকাশ :মে ২০, ২০১৮ ৮:১৮ অপরাহ্ণ