অনলাইন ডেস্ক:
৫ আগস্টের পর থেকে প্রায় পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার মুসলমান মংডু ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের সচিব টিন মং সোয়ে। বার্মার সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রথমবারের মতো এতো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করা হলো। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব এই তথ্য উল্লেখ করেন।
রাখাইন রাজ্য সরকারের সচিব বলেছেন, পাঁচ লাখেরও বেশি মুসলিম রিফিউজি বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। গত বছরের আগস্ট মাসের শেষ দিকে আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি)-এর আক্রমণের পর তারা পালিয়ে যায়। তবে কিভাবে এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সেটি বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
রাখাইনের আঞ্চলিক সরকারের সচিব জানিয়েছেন, গত বছরের ২৫ আগস্টের আগে রাখাইনে প্রায় ১০ লাখ পাঁচ হাজার মুসলিম ছিল। এখনও রাখাইনে প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার মুসলিম রয়েছে বলে দাবি করছেন সচিব টিন মং সোয়ে।
কিন্তু জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ সরকার যে হিসেব দিচ্ছে, তার তুলনায় পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের হিসেব প্রায় দেড় লাখ কম।
বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বিবিসিকে বলেছেন, গত ছয় মাসে বাংলাদেশে কত রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে, সেটি শুধু বাংলাদেশ সরকারই হিসেবে করেনি, বরং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থাও হিসেব করেছে- এবং সবাই ছয় লাখ ৯২ হাজার জন শরণার্থীর বিষয়ে একমত।
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর গত ছয় মাসে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এরই মধ্যে একটি চুক্তিও করেছে, কিন্তু প্রত্যাবাসনের মূল কাজটিই এখনও শুরু হয়নি।
জাতিসংঘের হিসেবের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের হিসেবে বড় পার্থক্য থাকলেও ঠিক কত মানুষ পালিয়ে গেছে সে বিষয়ে দেশটির সরকার আগে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি। জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের তথ্যে ব্যবধান রয়েছে। কিন্তু অতীতে মিয়ানমার সরকার সংখ্যাটি সুনির্দিষ্টভাবে কখনওই বলেনি। তারা শুধু বলেছিল কয়েক হাজার পালিয়ে গেছে।
মিয়ানমার সরকারের কর্মকর্তা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যে পরিসংখ্যানটি বলছেন, তাকে কিভাবে দেখছেন প্রত্যাবাসনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশে সরকারের কর্মকর্তারা?
বিষয়টি সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেন, সে অর্থে বলা যেতে পারে যে এটা তারা একটা প্রকাশ্য স্বীকৃতি দিলেন। তবে তারা যে হিসেব দিয়েছেন, সেটা শুধু মংডু এলাকার। আমাদের এখানে মংডু ছাড়াও রাথি-ডং এবং বুথি-ডং থেকেও লোক এসেছে। সেখানকার হিসেব যদি তাদের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায়, তাহলে সংখ্যাটি নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি পাবে।
প্রথম ধাপে ফেরত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে মিয়ানমারকে আট হাজারের বেশি রোহিঙ্গার নাম দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু একদিন আগেই মিয়ানমার সরকারের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে ওই তালিকা থেকে তারা মাত্র ৩৭৪ জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন এবং এদেরই প্রথম ধাপে ফেরত নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন যে মিয়ানমার ঠিক কিসের ভিত্তিতে এমন কথা বলেছে, সে সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তাদের কাছ থেকে এখনও পাওয়া যায়নি। বিবিসি।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর