২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৫০

রাঙামাটিতে পাহাড় ধস আশ্রয় কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুই পাবেনা: জেলা প্রশাসক

 

শাহ আলম,রাঙামাটি:

রাঙামাটির পাহাড় ধসে আশ্রয় কেন্দ্রের আংশিক ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুই পাবেনা।সম্প্রতি সাব জানিয়ে দিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান।সরকারি বরাদ্দ শেষ হওয়ায় ৪ গতকাল সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাহাড় ধসের ঘটনায় খোলা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথা। কিন্তু মানবিক কারণে এবং সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত অপেক্ষার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালু থাকছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো। ওই সময় পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে শহরে বিদ্যমান ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.আবু শাহেদ চৌধুরী।

এদিকে সরকারি পুনর্বাসন একনও অনিশ্চিত। এ মুহূর্তে কোথাও গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু করে নিতে কোনো উপায় নেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের। ফলে কোনো অবস্থাতেই আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে এবং সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ৭ সেপ্টেম্বর আশ্রয় কেন্দ্রগুলো চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন জানায়, ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ে সরকারিভাবে খোলা হয় ১৯ আশ্রয় কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান নেন দুর্যোগে স্বজন ও বাড়িঘর হারা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। পরে অনেকে চলে যাওয়ায় সর্বশেষ চালু রাখা ৬ আশ্রয় কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে বর্তমানে অবস্থান করছে ৩১৩ পরিবারের প্রায় ৮ শতাধিক মানুষ- যারা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভিটাবাড়ি হারা। তাদেরকে সরকারিভাবে পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চলছে। ভূমিধসের ঘটনায় প্রশাসনের নিরূপণ করা তালিকায় শহরসহ রাঙামাটিতে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ১৮০০। প্রাণহানি ঘটে ১২০ জনের।

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যা যা দরকার তা করবে সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় এবং বিধ্বস্ত হওয়া ভিটায় আর কাউকে বাস করতে দেয়া হবে না। সরকারি উদ্যোগে জায়গা খুঁজে নিয়ে সেখানে বাড়িঘর তৈরি করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু ঘটনার দীর্ঘ আড়াই মাস পরও এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে পুনর্বাসনের বিষয়টি অনিশ্চিত। এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে আশ্রয় কেন্দ্র চালানোর অর্থ ও খাবারের বরাদ্দ।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু শাহেদ চৌধুরী বলেন, সরকারি বরাদ্দ শেষ হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। ২৮ আগষ্ট সরকারি বরাদ্দ শেষ হয়েছিল। এরপর থেকে জেলা প্রশাসনের জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে চালানো হচ্ছে। তাই ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে মানবিক বিবেচনা করে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের জরুরি ত্রাণ তহবিল হতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। এর মধ্যে আরও বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেই বরাদ্দে যাত দিন সম্ভব চালানো হবে।
জেলা প্রশাসন জানায়, ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েচে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া পুনর্বাসনের জন্য উপযুক্ত জায়গাও আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত এবং জায়গা খুঁজে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর করে দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।

এদিকে পরিবার পরিজনসহ নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কিন্তু তাদের সরকারি পুনর্বাসন একনও অনিশ্চিত। পুনর্বাসন ছাড়া তাদের কোথাও গিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেয়ার কোনো কিছুই নেই বলে জানান তারা। তাই তারা কেবল সরকারি পুনর্বাসনের অপেক্ষায় দিন গুনছেন আশ্রয় কেন্দ্রে।
কেন্দ্রে অবস্থান করা ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, আমরা সব হারিয়েছে।

আমাদের এখন তো আর কিছুই নেই। যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু করে নেয়ার কোনো অবস্থা নেই। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ছয়টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে ২৬৫ জন, জিমনেসিয়াম হলে ১১২ জন, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০৮ জন, মোনঘর ভাবনা কেন্দ্রে ২১০ জন, রাঙামাটি স্টেডিয়াম হল রুমে ৭৪ এবং তবলছড়ি এনডিসি হিল কোয়ার্টারে ১৪ জন। ১৩ জুন থেকে এ পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র চালাতে খরচ গেছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা এবং ৮২ টন চাল।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৭ ২:১৭ অপরাহ্ণ