২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৫১
ফাইল ছবি

খনি থেকে কয়লা গায়েবের ঘটনায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা গায়েবের ঘটনায় খনির বিদায়ী এমডিসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খনির পক্ষে পার্বতীপুর থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান।

অভিযোগে মজুদকৃত কয়লার হিসাবের গড়মিলের বিষয়টি দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) এবং ৪০৯ ধারা অনুযায়ী এজাহারভুক্ত করে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। মামলা নং-৩০।

পার্বতীপুর থানার ওসি (তদন্ত) ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘মামলাটি দুদকের আওতাধীন হওয়ায় তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদায়ী খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নূর-উজ-জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলামসহ খনির ব্যবস্থাপনায় জড়িত অপর আসামিরা ওই কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িত। বাকি ১৫ জন আসামি প্রত্যেকেই ব্যবস্থাপক, উপ-ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা।

অভিযোগে জানানো হয়, খনি উন্নয়নের সময় (২০০১) থেকে ১৯ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২ দশমিক ৩৩ মে. টন কয়লা উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদিত কয়লা থেকে পার্শ্ববর্তী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৯ দশমিক ২৯ মে. টন কয়লা সরবরাহ, বেসরকারি ক্রেতাদের কাছে ডিও’র মাধ্যমে ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ দশমিক ৩৭ মে. টন কয়লা বিক্রি এবং কয়লা খনির বয়লারে ১২ হাজার ৮৮ দশমিক ২৭ মে. টন কয়লা ব্যবহার করা হয়। কয়লার উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার হিসাব করলে ১৯ জুলাই কোল ইয়ার্ডে রেকর্ডভিত্তিক কয়লার মজুদ দাড়ায় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৪০ মে. টন। কিন্তু বাস্তবে মজুদ ছিল প্রায় ৩ হাজার মে. টন কয়লা। অর্থাৎ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৪০ মে. টন কয়লা ঘাটতি রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৩০ কোটি টাকা বলে জানানো হয়।

অভিযোগে বলা হয়, এই ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকি ১৫ জন আসামি অনেক আগে থেকেই তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে সংঘটিত কয়লা চুরির ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অনুমিত হয়।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বেনজীর আহমেদ গত সোমবার বিকালে দুদকের পাঁচ সদস্যের দল নিয়ে খনি এলাকা পরিদর্শন করার পর জানান, কয়লা খনির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে কয়লা খনিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতার আলামত মিলেছে।

৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা খনির ইয়ার্ডেই থাকত। কিন্তু হঠাৎ কয়লা সঙ্কট দেখা দেওয়ায় গত রোববার ১৫ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন।

এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ১৯ জুলাই খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুর-উজ-জামান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলামকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পেট্রোবাংলা। বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিনকে সরিয়ে আনা হয়েছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে। বিদায়ী কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কাশেম প্রধানিয়াকে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়েছে।

প্রকাশ :জুলাই ২৫, ২০১৮ ৩:০৪ অপরাহ্ণ