আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি আরব ও ইসরাইল দুই দেশই আরব বিশ্বের জন্য একটি হুমকি। উভয় রাষ্ট্রই দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন লাভ করেছে। উভয় রাষ্ট্রই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে, যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং নিজেদের নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করেছে। যাই হোক, উভয় রাষ্ট্রই মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান কর্তৃত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মার্কিন রাজনীতিবিদদের একটি শক্তিশালী অংশ ও ভোটাররা, যারা মৌলবাদী ধর্মযাজকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত, ইসরাইলকে সমর্থন করা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব বলেন মনে করেন। আর এই প্রবণতা খ্রিস্টীয় ইহুদিবাদকে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত করেছে, যদিও সেটা শীর্ষ অগ্রাধিকার নয়।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের স্বৈরতন্ত্রকে মার্কিন সমর্থনের কারণ তেমনটা ধর্মীয় নয়; যতটা না এটি আমেরিকান কোম্পানিগুলোর এই অঞ্চলের বিশাল তেল সম্পদে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার কৌশল। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবাধীনে আরব উপদ্বীপে যেন তেন প্রকারের গণতান্ত্রিক সরকারও চলতে দেওয়া হবে না। কারণ তা হবে ইসরাইলি সামরিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য হুমকি। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক স্বৈরশাসকই ইসরাইলকে সমর্থন করেন। কিন্তু, ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলিদের জাতিগত বিদ্বেষের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর এ কারণেই তারা (স্বৈরশাসক), এমনকি সৌদি আরবের মতো আগাগোড়া স্বৈরতান্ত্রিক সরকারও ইসরাইলকে সরাসরি সমর্থন করতে পারে না। তবে সম্প্রতি ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্যে মিত্রতা করার যে উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে এই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থকে আরও সুসংহত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি আঞ্চলিক সামন্ত হচ্ছে তথাকথিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। আরো সঠিকভাবে বললে বলা যায়, এটি একটি উপ-সামন্ত। ফিলিস্তিনের কথা বলার মতো কোনো স্বাধীন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ১৯৯০ এর দশক থেকে এই তথাকথিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে, ইসরাইলি সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধের যে বৈধতা ফিলিস্তিনিদের আছে তা দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ একটি পুতুল সরকার, যাকে ইসরাইলি দখলদারিত্বে উপ-ঠিকাধারী বলা যায়। আর এর স্বৈরশাসক হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, যার চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগেই। তিনি মনে করেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ‘সবচেয়ে অজনপ্রিয় নিরাপত্তা সমন্বয়’ রক্ষা করা তার পবিত্র দায়িত্ব।
হামাসের সশস্ত্র বিদ্রোহের মতো সশস্ত্র সংগ্রামে নিয়োজিত যোদ্ধাদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আব্বাসের নিরাপত্তা বাহিনী তার নীতির সমালোচনাকারী সাংবাদিকদের পাশাপাশি ইসা আম্রোর মতো মানুষ যারা অহিংস প্রতিরোধের পক্ষে কথা বলছেন, তাদের জেলে ভরছে। আর অন্যান্য স্বৈরশাসকের মতো আব্বাসও সত্য বলাকে ‘নিরাপত্তার হুমকি’ মনে করছেন। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, আব্বাস যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তবে তা ফিলিস্তিনিদের কাছে সাদরে গ্রহণযোগ্য হবে। আর তার অজনপ্রিয়তার অর্থ হচ্ছে, তাকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে যে, ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ তার পদত্যাগ ঘটাতে পারে।
তবে আব্বাস দখলদারী ইসরাইল কিংবা আমেরিকাকে কী পরিমাণ ছাড় দেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি সহিংস চুক্তি রয়েছে, ফলে প্রবল জনরোষ সত্ত্বেও তার বাইরে যাওয়ার রিস্ক নেওয়া সম্ভব হবে না। জেরুজালেম ইস্যুতে ইসরাইলের পক্ষে ট্রাম্পের অবস্থানকে এক ধরনের সীমানা বলে মনে হয়। সম্প্রতি ইসরাইলি গণমাধ্যম হারেটজের একটি নিবন্ধে ‘শীর্ষ ফিলিস্তিনি কূটনীতিক’ এর বরাত দিয়ে ভয়ংকর শিরোনাম করা হয়। তাতে বলা হয়, জেরুজালেম বিষয়ে ট্রাম্পের ভাষণের পর ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান শেষ হয়েছে’। কিন্তু দুঃখজনক হলো, ফিলিস্তিনি কূটনীতিক সায়েব এরাকাতের পুরো বক্তব্য ওই নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়নি। বরং এর মাধ্যমে খেলার ফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই এ সম্ভাব্যতা তৈরি হয়েছে যে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আব্বাসকে ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে পরবর্তী অবস্থা কী হবে? যদি মনে হয়, খুব সম্ভবত, সৌদি আরব ও আমেরিকা এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে, তাহলে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকার, আকৃতি বা নির্দিষ্টতার পরিবর্তে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পতন ঘটবে। তাই এরাকাত এবং তার অন্য সহকর্মীদের এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। সূত্র: মিডেল ইস্ট মনিটর।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি