২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৫৭

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা: আশা ও হতাশা

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর একজন শিক্ষার্থীকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নামক অগ্নি পরীক্ষায় জয়ী হয়ে নিজের আসনটি নিশ্চিত করতে হয়। এ সময়টি জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হওয়ায় অভিভাবকরাও সন্তানের আলোকিত ভবিষ্যতের জন্য নিরলস সগ্রাম করে যান। সারা দেশের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যান নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য। আর এ ছুটে চলার দীর্ঘ পথ খুবই বন্ধুর এবং কণ্টকাকীর্ণ।

কেননা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন বিভাগ কিংবা জেলা পর্যায়ে অবস্থিত। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পরের দিন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা, ফলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একজন শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার। তার শুক্রবার পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, আবার পরের দিন বা তারপরের দিন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাহলে তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে ভাবা যায়! আসলে বাস্তবে তাই। ভর্তি পরীক্ষাগুলো এমনই হয়।

অনেক শিক্ষার্থী কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে যান, যা তার স্বপ্ন পূরণের পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

এবার একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার সময়ে কেমন খরচ লাগতে পারে, তার একটি মোটামুটি ধারণা দেয়া যাক- বাংলাদেশে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে আসন রয়েছে ৬৪ হাজার। কিন্তু প্রতি বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৮ লক্ষ কিংবা তারও বেশি শিক্ষার্থী। ফলে, ভর্তি পরীক্ষা রণাঙ্গনে পরিণত হয়। এতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয় না। তাদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছুটে চলতে হয়, আর একজন শিক্ষার্থী নিজেকে নিরাপদ রাখতে যদি কমপক্ষে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদর করেন, তাহলে তার মোট আবেদন ফি লাগে ন্যূনতম ৫০০×২০=১০,০০০ টাকা।

তবে এমনও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে একটি ইউনিটে আবেদ করতেই খরচ হয় ১০০০ কিংবা ১৫০০ টাকা, এর সাথে যাতায়াত খরচ এবং থাকা-খাওয়ার খরচ মিলিয়ে একটি মোটা অঙ্কের বাজেট।

কিন্তু, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। আর গ্রামের একজন শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষে এত খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। এমন শত ভোগান্তি লাঘব করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC) সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা শিক্ষার্থীবান্ধব এবং প্রশংসনীয়।

তবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে, যেগুলো মোকাবিলা করতে না পারলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। প্রথমত, প্রশ্ন ফাঁসের আতঙ্ক, যা বর্তমানে পরীক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে বা কোনোভাবে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলে বঞ্চিত হবে প্রকৃত মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা এবং অযোগ্যরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোতে নিজেদের জায়গা করে নেবে, যা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি স্বরূপ।

অন্যদিকে, যেহেতু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় এক ঘণ্টার মধ্যেই লাখো প্রতিযোগীদের মধ্যে প্রকৃত মেধাবীদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে, সেহেতু যদি কোনো পরীক্ষার্থী অসুস্থ বা অন্য কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারেন, তাহলে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় তাকে কাতরাতে হবে দীর্ঘদিন। আর এমন ঘটনা যদি সেকেন্ড টাইমারদের ক্ষেত্রে ঘটে, তাহলে এর পরিণাম কতটা ভয়ানক হতে পারে, তা কল্পনা করাও দুরূহ। আবার, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সব বিষয় (সাবজেক্ট) না থাকায় চান্সপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিষয় পছন্দক্রমে জটিলতার সম্মুখীন হবেন।

এরূপ কিছু নেতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীবান্ধব। কিন্তু উপরে যে সমস্যাগুলো চিন্হিত করা হয়েছে, তা সমাধান করা ইউজিসির দায়িত্ব এবং কর্তব্যও বটে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সকল ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে কঠোর নজরদারি রাখবে এবং পুরো প্রক্রিয়া পড়ুয়া, মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ মঙ্গলময় হবে বলেই আশা করছি।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০ ৬:৫৭ অপরাহ্ণ