২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৪৭

বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হচ্ছেন ভারতীয় দলিতরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

হিন্দুধর্মের জাতিভেদপ্রথা দলিত সম্প্রদায়ের কাছে এক দুঃস্বপ্ন৷ ভারতে জাতপাত নিয়ে দলিতদের ওপর কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নির্যাতন যেন ক্রমশই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে৷ এর থেকে মুক্তি পেতে দলিত শ্রেণি দলে দলে গ্রহণ করছে বৌদ্ধধর্ম৷ ভারতে ৮৫ লাখেরও বেশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাস৷ তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ধর্মান্তরিত দলিত শ্রেণির৷

এর পেছনে একটিই প্রধান কারণ– জাতপাতের ভিত্তিতে নিম্নবর্গের দলিত সম্প্রদায়ের ওপর হিন্দুত্ববাদীদের অত্যাচার ও সামাজিক বৈষম্য৷ এটি যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কয়েক দিন আগে গুজরাটের উনাতেই দলিত পরিবারসহ প্রায় ৪০০ জন নিজেদের আত্মসম্মান রক্ষায় বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছেন৷ উনাও দলিতদের পেশা ছিল মরা গবাদিপশুর ছাল ছাড়িয়ে তা বিক্রি করা৷

বিজেপি-আরএসএস জমানায় অতি সক্রিয় তথাকথিত গোরক্ষকরা তাদের কয়েকজনকে উনা শহরের বাইরে নিয়ে গিয়ে গাড়ির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারধর করেন৷ এ ঘটনাকে গোটা ভারত ধিক্কার জানিয়েছে৷ পুলিশের কাছে অভিযোগ করে ফল হয়নি৷ রাজ্যের বিজেপি সরকারও তাদের অভিযোগের প্রতিকারে সাড়া দেয়নি।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. পুজন সেন বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে এই লোকগুলোর জীবিকা ওটাই৷ ওরা বাঁচবে কীভাবে? ওদের সামনে বিকল্প জীবিকাও তো আর নেই৷ এটি বোঝার মতো পরিবেশ আমাদের দেশে নেই৷ বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরনের ঘটনা হয়তো বেড়েছে, কিন্তু সব রাজনৈতিক দলেই এটি কমবেশি ছিল এবং আছে৷ সব দলই এ জন্য দায়ী৷

ভারতে দলিতদের ওপর লাঞ্ছনা ও অপমান অহরহ ঘটছে নিত্যদিন৷ গত ২৯ এপ্রিল বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরিপ্রার্থীদের মেডিকেল টেস্টের সময় দলিতদের বুকে দলিত শব্দটি সেঁটে দিয়ে তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়৷ রাজস্থানে দলিতদের বিয়েতে বর ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গেলে, পথে শখানেক হিন্দু তাকে ঘোড়া থেকে নামিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে বাধ্য করেন৷ ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার প্রথা উত্তর ভারতে নাকি স্রেফ অভিজাত শ্রেণিরই আছে৷

অপমান ও নিগ্রহের হাত থেকে মুক্তির পথ হিসেবে গত ২০১৫ সালে প্রায় পাঁচ লাখ দলিত হিন্দু নাগপুরে এক গণ-অনুষ্ঠানে একযোগে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন৷ তার আগে ২০০৭ সালে প্রায় লাখখানেক দলিত ও উপজাতি হিন্দু ধর্মান্তরিত হয়ে বৌদ্ধ হন৷ গত সপ্তাহে ভারতের সংবিধান রচয়িতা ড. বিআর আম্বেদকারের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে আত্মঘাতী দলিত গবেষক ছাত্র রোহিত ভেমুলার মা ও ভাই বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন৷

উল্লেখ্য, রোহিত হায়দরাবাদের এক হোস্টেলে থেকে পিএইচডি করছিলেন৷ হোস্টেলের অন্যান্য উচ্চবর্গের হিন্দু সহপাঠীর অপমানজনক ব্যবহার এবং লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে মানসিক যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেন তিনি৷ তবু রোহিতের পরিবার ন্যায়বিচার পাননি৷ ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আম্বেদকরের নাতি। ৭০ বছর আগে ১৯৫৬ সালে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন বিআর আম্বেদকর৷

এসব ঘটনায় কংগ্রেস জাতপাত নিয়ে শুচি বায়ুগ্রস্ত বিজেপি ও মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন সংঘ পরিবারের সমালোচনা করে বলেছে, এটি ভারতীয় সংবিধানের ওপর হামলা৷ দলিতদের গলায় কখনও কলসি ঝোলানো হয়, কখনও ঝাড়ু বাঁধা হয়, কখনও দলিত মহিলাদের মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না, কখনও গ্রামের কুঁয়ো থেকে জল নিতে দেওয়া হয় না৷ উচ্চবর্গের হিন্দুত্ববাদীদের মানসিকতাই এর জন্য দায়ী৷ দলিতদের এই ক্ষত সহজে মেটার নয়, মন্তব্য করেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব৷

প্রশ্ন উঠেছে, জাতপাতের ভেদাভেদ ভারতীয় সমাজে পুরনো ব্যাধি সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তা থেকে মুক্তি পেতে দলিতরা শুধু বৌদ্ধধর্মই কেন বেছে নিচ্ছেন, ইসলাম বা খ্রিস্টান ধর্ম নয় কেন? হিন্দুদের অনেকের ধারণা, বৌদ্ধধর্ম আসলে হিন্দুধর্মেরই অঙ্গ৷ খ্রিস্টান বা ইসলামধর্ম বাইরে থেকে এসেছে৷ খ্রিস্টান ধর্মগ্রহণ করে দলিতরা দেখেছে সেখানেও উঁচু-নিচু ভেদ আছে৷ সমানাধিকার নেই৷ দলিত খ্রিস্টানরা উচ্চবর্গের খ্রিস্টানদের সমাধিভূমিতে নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে কবর দিতে পারেন না৷ ভারতীয় মুসলিম ক্ষেত্রেও একই কথা৷ সেখানেও উঁচু-নিচু ভেদাভেদ আছে।

প্রকাশ :মে ৭, ২০১৮ ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ