মারুফ শরীফ, নিজস্ব প্রতিবেদক :
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’-এর পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আবারও লিফলেট বিতরণ শুরু করছে বিএনপি। ১লা এপ্রিল রোববার সকাল থেকে দেশব্যাপী এ যোগে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। চলবে আরও তিন চার দিন।
রোববার বেলা ১২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নয়াপল্টন এলাকার সকল এলাকাবাসী, দোকানি, রিকশাচালক ও যাত্রী এবং সাধারণ পথচারীদের হাতে হাতে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত লিফলেট তুলে দেন।
অনেকটা সময় লিফলেট বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্রের মা’ খ্যাত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি সাজানো মিথ্যে মামলায় সরকার অন্যায়ভাবে কারাবন্দি করে রেখেছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে আমরা সংগ্রাম করছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা শপথ নিয়েছি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’-এর মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করব। তাকে আটক রেখে জনগণের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেয়ার যে নীল নকশা সরকার এঁটেছে, সেটা কিছুতেই পূরণ হতে দেব না। ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’-এর মাধ্যমেই তাকে মুক্ত করে আনব।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিষয়ে মিডিয়ার আরও বেশি জানা দরকার বলে মনে করেন ফখরুল। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন, বিএনপি এ বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে। জাতি জেনেছে এবং দেখছে যে, ‘কী হচ্ছে’।
‘নৌকায় ভোট চাওয়া রাজনৈতিক অধিকার’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক অধিকার আমাদের সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন আরপিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটা সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান। বিষয়টা তো হচ্ছে, তাঁরা (আওয়ামী লীগ) সরকারি টাকা খরচে সমাবেশ করে, লোক ডেকে এনে নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন, ভোট দিতে শপথ করাছেন। অন্য কেউ ভোট চাইতে পারবে না, কাউকে কোনো সুযোগ দেয়া হবে না, এটা কখনো মেনে নেয়া যায় না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মূল বিষয়টা আপনারা (সাংবাদিকরা) বের করে আনেন। মিডিয়াতে একটা প্রবণতা রয়েছে, মূল জায়গাতে না গিয়ে আমরা অন্যসব জায়গা খুঁজে বেড়াই। এটাই সমস্যা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকের মূল বিষয়টা কী? দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই। আমাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকার নেই। আপনাদের (মিডিয়ার) সবকিছু লেখার এবং বলার অধিকার নেই। সুতরাং, সেই জায়গাগুলোতে আমাদের যাওয়া উচিত। আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিত।
খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না- সাংবাদিকের এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আজ আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক যৌথসভা আছে, সেখানে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাজানো এক মামলার রায়ে কারাবন্দি হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁরই মুক্তির দাবিতে ১ মার্চ প্রথম দফায় লিফলেট বিতরণ কর্মসূচী পালন করে দলটি। ৩০ দিন পর আবারও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি।
রাজধানী ঢাকার আরো বেশ কয়েকটি স্পটে লিফলেট বিতরণ করছে বিএনপি। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে মহাখালী এলাকা, ড. মঈন খানের নেতৃত্বে উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকা, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে মিরপুর কাজীপাড়া এলাকা, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নেতৃত্বে মিরপুর-১ নাম্বার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুকের নেতৃত্বে মিরপুর-১০ নাম্বার এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর নেতৃত্বে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা এলিফ্যান্ট রোডে লিফলেট বিতরণ করছেন বলে জানিয়েছেন চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং-এর সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
এদিকে মহাখালী এলাকায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালীম ডোনারকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে এ আটকের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
কি আছে বিএনপির লিফলেটে :-
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির লিফলেটে লেখা রয়েছে, ‘লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত মহান স্বাধীনতা সোনালী অর্জন গণতন্ত্র, সুশাসন, বৈষম্যহীন সমাজ আজ বিনা ভোটে নির্বাচিত ক্ষমতালিপ্সু সরকারের দুর্নীতি, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারের হাতে অর্থহীন হয়ে পড়েছে।
লিফলেটে লেখা আছে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য রাষ্ট্রের সংবিধান থেকে তত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোট প্রথা বাতিল করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং জনগণের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সীমাহীন ও অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতীষ্ঠ। শ্রমিকের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির শিকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। গত কয়েক বছরে মেগা প্রজেক্টের নামে সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগীরা মেগা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। অথচ তাদের কোনো বিচার করা তো দূরের কথা গ্রেফতার করা হলেও কয়েকদিন না যেতেই সদর্পে মুক্তি পায় তারা। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করছে, মন্ত্রিত্ব করছে।
অন্যদিকে দেশের প্রতিবাদী জনগণের কণ্ঠস্বর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে রাখা হয়েছে। হাইকোর্টে জামিন পেলেও ৭৩ বছর বয়সী এই অসুস্থ নেত্রীর জামিনের আপিল শুনানির জন্য দেড় মাসের বেশি সময় দেয়ার ঘটনাকে প্রবীণ আইনজীবীগণ অস্বাভাবিক বলে বর্ণনা করেছেন। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করার সরকারি অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার এবং অন্যান্য নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ