২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৩২

সর্বোচ্চ সময় ‘শূন্য’ প্রধান বিচারপতির পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের পর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাননি রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বেশি দিন এই পদটি শূন্য থাকেনি।

অবশ্য প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেয়া না হলেও অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিয়া দায়িত্ব পালন করছেন সিনহার ছুটি অনুমোদন হওয়ার পর থেকেই।

এক মাসের ছুটিতে সিনহা দেশের বাইরে গিয়েছিলেন গত ১৩ অক্টোবর। ১০ নভেম্বর তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ উঠা সিনহা না ফিরে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গত ১৪ নভেম্বর সেই পদত্যাগপত্র অনুমোদন করেন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন  বলেন, রাষ্ট্রপতি ১৪ নভেম্বর অনুমোদন করলেও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র দেয়ায় সেদিন থেকেই তা কার্যকর হয়েছে।

এই হিসেবে গত ১৪ দিন ধরে বিচার বিভাগের প্রধানের পদটি শূন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে একবার ১৩ দিন দেরিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার নজির আছে। সেটি হয়েছিল ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে। ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী অবসরে যান। এরপর ১৪ জানুয়ারি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সাহাবুদ্দিন আহমেদ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ  বলেন, ‘ইতিপূর্বে কোনো প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম। দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য ছিল এরশাদের সময়। প্রধান বিচারপতির পদটি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি খুব দ্রুতই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে।’

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এটি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। রাষ্ট্রপতিই ভালো জানেন তিনি কখন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। এটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার কোনো দরকার নেই। রাষ্ট্রপতি নিশ্চয় এই পদটি বেশিদিন খালি রাখবেন না।’

সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’

তবে সংবিধানে প্রধান বিচারপতি অবসরে গেলে বা পদত্যাগ করলে কতদিনের মধ্যে নিয়োগ দিতে হবে তার কোনো উল্লেখ নেই।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব সম্পর্কে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘৯৭ অনুচ্ছেদে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতির কথা বলা আছে; যিনি আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি হবেন, তিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হবেন। সেখানে পরিষ্কারভাবে বাংলায় এ কথা বলা আছে ‘অনুরূপ’। প্রধান বিচারপতির অনুরূপ ক্ষমতা প্রয়োগের কথা বলা আছে। অনুরূপ মানে হচ্ছে-প্রধান বিচারপতি যা করতে পারতেন তিনিও তা করবেন।

‘যিনি এখন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি তিনি কিন্তু একটা শপথ নিয়েছেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে। অনুরূপ মানে হচ্ছে- চিফ জাস্টিসের সব ক্ষমতা তিনি পালন করতে পারবেন। সেখানে কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো বিভাজন করে দেয়া হয়নি যে, তিনি কী করতে পারবেন কী পারবেন না।’

অস্ট্রেলিয়ায় উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে এস কে সিনহা

ষোড়শ সংশোধনী উচ্চ আদালত থেকে বাতিল হওয়ার পর থেকেই সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সমালোচনা করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে ঘোরতর আপত্তি তোলা হয়েছে। এই অবস্থায় গত ২ অক্টোবর অসুস্থতার কথা বলে এক মাসের ছুটির আবেদন করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন আর পরে তা আরও ১০ দিন বাড়ান হয়।গত ১৩ অক্টোবর সিনহা অস্ট্রেলিয়াসহ তিন দেশের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার পরদিন সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সিনহার বিরুদ্ধে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়মসহ ১৩টি অভিযোগের কথা জানানো হয়।

ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, এসব অভিযোগের বিষয়ে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন এবং ওই পাঁচ বিচারপতি সিনহার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি এসব বিষয়ে কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে পারেন। আর এই অবস্থায় ওই পাঁচ বিচারপতি সিনহার সঙ্গে এজলাসে বসে বিচার কাজ না করার সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়ে আসেন।

এই প্রেক্ষিতে বিচারপতি সিনহা পদত্যাগ করার কথা পাঁচ বিচারপতিকে জানিয়েছিলেন। আর ২ অক্টোবর এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল। কিন্তু সেদিন তিন তাদেরকে কিছু না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটির আবেদন করেন।

সিনহার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করবে বলে ১৫ অক্টোবর জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী। তবে সে অনুসন্ধান এখনও শুরু হয়নি।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ২৪, ২০১৭ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ