২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:২১

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৮৩তম জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ফরিদপুরে। জন্ম বাংলাদেশে হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বেড়ে উঠেছেন বহুমাত্রিক এই লেখক। পড়াশুনাও কলকাতায়।

‘প্রথম আলো’ অথবা ‘পূর্ব পশ্চিম’ এর মতো মডার্ন ক্লাসিকের জনক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৮৩তম জন্মদিন আজ।

নিজ প্রতিভা গুণেই জনপ্রিয় লেখকে পরিণত হয়েছিলেন সুনীল। তার প্রথম ভালবাসাই ছিল কবিতা। ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ কবিতা দিয়েই বিশেষ ভাবে পাঠক সমাদৃত এই কবি নিজেকে কেবল কবিতাতেই আটকে রাখেননি। সাহিত্যের সব শাখাতেই ছিলেন বাঁধনহারা। গল্প, কবিতা, উপন্যাস নিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা দু’শো ছাড়িয়ে। বাংলা সাহিত্যের পুরো একটি প্রজন্মজুড়েই ছিল তার অবগাহন। আর এজন্য তার মৃত্যু ছিল আক্ষরিক অর্থেই বাংলা সাহিত্যে একটি যুগের অবসান।

‘হঠাৎ নীরার জন্য’ কবিতায় এক বছর ঘুমোবো না বলা কবি ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর চিরতরে ঘুমিয়ে যান।

বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। সুনীলের মা কখনোই চাননি তার ছেলেও শিক্ষক হোক। শিক্ষক না হয়ে তিনি হয়েছিলেন লেখক। অবশ্য মার্কিন মুলুকে আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন সুনীল। এরপর দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন, সাংবাদিকতা করেছেন, জীবনের শেষ চার বছর সাহিত্য আকাদেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’। সেই উপন্যাসই ছিল আগমনধ্বনি। হইচই ফেলে দেওয়া বাংলা আধুনিক কবিতার পত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’ এর অন্যতম জনকও ছিলেন এই সুনীল।

তিনি দু’হাতে লিখে গেছেন। লেখক হিসাবে শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন । প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে লিখতে বসতেন, এমনধারা বজায় ছিল তার পঞ্চাশ বছর অবিরল। কলকাতার নাগরিক জীবনকে তিনি অনন্য সাধারণ মসৃণতায় নিয়ে এসেছেন সাহিত্যে। পরিণত বয়সে এসে রচনা করেছেন ‘সেই সময়’, ‘প্রথম আলো’ অথবা ‘পূর্ব পশ্চিম’ এর মতো মডার্ন ক্ল্যাসিক। আবার ‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে পায়জামা পরা ভবঘুরে বেকার চরিত্রটিকে একটা গোটা প্রজন্মের কাছে প্রায় আইকন করে তুলতে পেরেছিলেন সুনীল।

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’, প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ , ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’, ‘শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা’, ‘অর্ধেক জীবন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘অর্জুন’, ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘ভানু ও রাণু’, ‘মনের মানুষ’ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি ‘কাকাবাবু-সন্তু’ নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা।

কাকাবাবু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি চমৎকার কাল্পনিক চরিত্র। কাকাবাবু মধ্যবয়েসি অবসরপ্রাপ্ত প্রতিবন্ধী এক মানুষ, যিনি অসম্ভব সাহসী। কাকাবাবুকে তার ভাইপো সন্তু আর সন্তুর বন্ধু জোজোকে নিয়ে অনেক অ্যাডভেঞ্চারে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

কাকাবাবুর কিছু অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী হল : ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, ‘নীলমূর্তি রহস্য’, ‘বিজয়নগরের হীরে’, ‘সন্তু ও এক টুকরো চাঁদ’, ‘জোজো অদৃশ্য’, ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘কাকাবাবুর প্রথম অভিযান’, ‘উল্কা রহস্য’, ‘কাকাবাবু ও বজ্রলামা’, ‘মিশর রহস্য’, ‘সন্তু কোথায়? কাকাবাবু কোথায়?’, ‘আগুন পাখির রহস্য’, ‘কাকাবাবু ও এক ছদ্মবেশী’, ‘কাকাবাবু বনাম চোরাশিকারি’, ‘কাকাবাবু ও চন্দনদস্যু’, ‘কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল’, ‘খালি জাহাজের রহস্য’, ‘ভূপাল’, ‘রহস্য’, ‘কাকাবাবু বনাম মূর্তিচোর’, ‘জঙ্গলগড়ের চাবি’, ‘ভয়ংকর সুন্দর’, ‘পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক’, ‘কলকাতার জঙ্গলে’, ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’, ‘রাজবাড়ির রহস্য’, ‘মহাকালের লিখন’, ‘একটি লাল লঙ্কা’, ‘সাধুবাবার হাত’, ‘কাকাবাবু ও মরনফাঁদ’, ‘সিন্দুক রহস্য’ ও ‘এবার কাকাবাবুর প্রতিশোধ’।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনী চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের দু’টি কাহিনী ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ এবং ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ও চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।

১৯৬৭ সালে তিনি বিবাহ করেন স্বাতী বন্দোপাধ্যায়কে। একমাত্র সন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়। ২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। অমর এই লেখককে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

প্রকাশ :সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৭ ১২:৩০ অপরাহ্ণ