২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৯

বিএনপি’র ভিশন-২০৩০

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দলের নতুন কর্মসূচী ভিশন-২০৩০ উপস্থাপন করেছেন গত বুধবার। রাজধানীর গুলশানস্থ ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ওই প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দূতাবাস, হাইকমিশন ও দাতাসংস্থার প্রতিনিধি এবং দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ উপস্থিত ছিলেন। বেশ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল বেগম খালেদা জিয়ার এ সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে।
ভিশন-২০৩০ তে ৩৭টি বিষয়ে ২৫৬টি দফায় প্রস্তাবনা ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-গণতন্ত্র, সুশাসন, প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতার শক্তি পুনরুদ্ধার, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ, অর্থনীতি, গবেষণা ও উন্ন্য়ন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, বিদেশে কর্ম সংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ, নিরাপদ খাদ্য ও ওষুধ, স্বাস্থ্যসেবা, যুব, নারী ও শিশু, জলবায়ূ পরিবর্তন, পানিসম্পদ-নীল অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, শিল্প, যোগাযোগ,সম্পদ সংরক্ষণ, সামাজিক ব্যাধির সমস্যা, ভূমিকম্প, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অনগ্রসর অঞ্চল, এবং সামপ্রদায়িক সম্প্রীতি।
বেগম খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক বিধান যুক্ত করা হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করার অঙ্গীকারের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রস্তাবনায় সুনীতি, সুশাসন ও সুসরকারের সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের সংবাদ সম্মেলন ও ভিশন-২০৩০ ঘোষণার বিষয়টি দেশবাসীর মধ্যে প্রচন্ড আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামী দিনে তাঁর দলের রাাজনীতি ও ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দেশ ও জাতির কল্যাণে কী কী পদক্ষেপ নিবেন, তা জানার কৌতুহল ছিল সবার। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য দেশবাসীর সে প্রত্যাশা পূরণ করেছে বলা যায়। কেননা, যেসব বিষয়ের ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সঙ্গে দেশবাসীর প্রত্যাশার মিল রয়েছে। এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ একটি বাস্তবসম্মত, গণপ্রত্যাশিত ও আশার আলোকবর্তিকা সংবলিত প্রস্তাবনা ও প্রতিশ্রুতি। এ প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্র পরিচালনায় যুগোপযোগী যে দৃষ্টিভঙ্গী ফুটে উঠেছে, তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ভিশন-২০৩০ সম্পর্কে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভিশন-২০৩০ কে মেধাহীন, অন্ত:সারশূন্য আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙ্গিন বেলুন। এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এটি জাতির সঙ্গে একটি তামাশা ও প্রতারণা এবং জনবিচ্ছিন্ন দলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়।’ এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকগণ ভিশন-২০৩০ সম্বন্ধে ব্যক্ত করেছেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলেছেন, এটা ইতিবাচক প্রস্তাবনা, তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের ভিশন-২০৩০ সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের প্রতিক্রিয়াকে ঈর্ষাকাতরতার বহিঃপ্রকাশ বললে ভুল হবে বলে মনে হয় না। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি শিষ্টাচারের যেমন লঙ্ঘন করেছেন, তেমনি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়ে ফেলেছেন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ অনুসরণেই খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ দিয়েছেন। তিনি যে কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছেন,তার অনেক কিছুই আওয়ামী লীগ আগেই বলেছে।’ লক্ষ্যণীয় হলো ওবায়দুল কাদের একদিকে ভিশন-২০৩০কে মেধাহীন, অন্ত:সারশূন্য বলছেন, আবার বলছেন এসব কর্মপরিকল্পনার কথা তারা আগেই বলেছেন। তাহলে কি দেশবাসী এটা ধরে নেবে যে, কাদের সাহেবদের রূপকল্প-২০২১ মেধাহীন, অন্ত:সারশূন্য ছিল?
ভালে কে ভালো বলার কিংবা ভালো কথা বা কাজকে সাধুবাদ জানানোর সংস্কৃতি যে আওয়ামী লীগ আজও রপ্ত করতে পারেনি, সেটা আবারও প্রমানিত হলো। নইলে বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবতানির্ভর কর্মপরিকল্পনা সম্বন্ধে তারা এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারতেন না। তবে, আওয়ামী লীগ নেতারা যা-ই বলুন না কেন, ভিশন-২০৩০ দেশবাসীর কাছে সমাদৃত হয়েছে নিঃসন্দেহে। যার প্রমাণ মিলেছে গত দুই দিনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আমরা মনেকরি, বিএনপি চেয়ারপার্সন ভিশন-২০৩০ ঘোষণার মাধ্যমে তাঁর দলের ইতিবাচক রাজনীতির বিষয়টিই পুনর্বার তুলে ধরলেন। তাঁর এ প্রস্তাবনা দেশবাসীর মধ্যে যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সেটাই মূলত: আওয়ামী লীগের গাত্রদাহের কারণ।

প্রকাশ :মে ১১, ২০১৭ ৪:১৬ অপরাহ্ণ