১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৪৮

মহাসড়কে ট্রাকচালকদের জন্য তৈরি হচ্ছে আধুনিক বিশ্রামাগার

মহাসড়কগুলোয় ট্রাকচালকদের জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার তৈরি হচ্ছে। দেশের চারটি মহাসড়ক—ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এসব বিশ্রামাগার তৈরি করছে সরকার। বিশ্রামাগারগুলোয় চালকদের জন্য বাথরুম, ঘুমানোর জন্য খাট-মশারি, নামাজের স্থানসহ প্রয়োজনীয় সব আধুনিক সুবিধা থাকবে। থাকবে হোটেল ও কফিশপও। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে এইসব তথ্য জানা গেছে।

সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মহাসড়কে দীর্ঘপথ বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে চালকদের শরীরে ক্লান্তি চলে আসে। চোখে ঘুম-ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানোর ফলে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এ নিয়ে সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে সড়ক পরিবহন নেতারা একাধিক বৈঠক করেন। বৈঠকে বারবার মহাসড়কে বিরামহীনভাবে দীর্ঘসময় ধরে চালকদের গাড়ি না চালিয়ে পথে পথে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজনীতার বিষয়টি আলোচিত হয়। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর সরকার মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি-অবসাদ দূর করে স্বস্তিদায়কভাবে যাত্রার লক্ষ্যে আধুনিক সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে মহাসড়ক বিভাগ থেকে ‘টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পার্শ্বে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গত ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ও  জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রকল্প বিবরণী থেকে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-খুলনা এই চারটি মহাসড়কের কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও মাগুরা জেলার নিমসার, জগদীশপুর, পাঁচিলা ও লক্ষীকান্দর এলাকায় বিশ্রামাগারগুলো তৈরি করা হবে। বিশ্রামাগারগুলো নির্মাণ প্রক্রিয়া চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের ৩০ জুন মেয়াদে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রস্তাবিত ‘টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পার্শ্বে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে (জিওবি) অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। এর জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২৬ কোটি ২১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ২৬ হাজার ২৮০ ঘনমিটার সড়কবাঁধ নির্মাণ করা হবে। ভূমি উন্নয়ন করা হবে ৬০ লাখ ৫ হাজার ১৪৪ দশমিক ৩০ ঘনমিটার। বিশ্রামাগার এলাকায় ৪৪ হাজার ৩৭৭ দশমিক ১০ বর্গমিটার এলাকা ল্যান্ডস্কেপিং ও সবুজায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় বিশ্রামাগারের পাশে কভারসহ আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হবে মোট ৩ হাজার ১২৩ দশমিক ১০ মিটার এলাকায়। থাকবে আরসিসি বক্স কালভার্টও। ২ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ ১ হাজার ৮৬৩ বর্গমিটার এলাকায়। বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হবে ২ হাজার ৬১১ দশমিক ১০ মিটার এলাকায়।

সূত্র জানিয়েছে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২০২০) ২য় অংশের ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজি শীর্ষক ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের লক্ষ্যমাত্রায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৪টি জাতীয় মহাসড়কের পার্শ্বে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য পার্কিং সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উল্লিখিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে অনেক গবেষণার পর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর ফলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমবে। একইসঙ্গে চালকদেরও মানসিকার উন্নয়ন ঘটবে।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে তোলো দীর্ঘ দিনের একটি দাবি পূরণ হলো।’ এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাঙ্গাঁ বলেন, ‘এর ফলে একজন ড্রাইভার চট্টগ্রাম থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত এই দীর্ঘ পথ অতিক্রমের সময় প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে পারবেন। আর বিশ্রামাগারগুলোর পাশে মানসম্মত হোটেল ও কফি শপ থাকবে। প্রয়োজন অনুযায়ী চালকরা এসব হোটেল ও কফিশপ থেকে খাওয়া-দাওয়া করতে পারবেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জান্নাত টান্সপোর্ট কোম্পানির ট্রাক চালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমরা রাস্তায় যখন গাড়ি চালাই, তখন বেলা কয়টা তা বুঝি না। আবার রাত কয়টা তাও বুঝি না। সূর্য উঠলে বুঝি দিন হচ্ছে। আবার অন্ধকার হলে বুঝি রাত হয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার টাইম নাই, স্থান নাই। বিশ্রামের জায়গা নাই। অনেক সময় আমরা টানা ২০/২২ ঘণ্টা গাড়িতে থাকি। রাস্তার পাশে বা পেট্রোল পাম্পে বাথরুমের কাজ সারি। কখনও টানা দুই-তিন দিনেও গোসল করার সুযোগ পাই না।’ সরকারের এ ধরনের বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।

প্রকাশ :আগস্ট ২৯, ২০১৯ ১২:০৭ অপরাহ্ণ