১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:০৫

রাজধানীর আবাসিক এলাকায় ছাপাখানা, অগ্নিঝুঁকি

দেশজনতা অনলাইন : অগ্নি ঝুঁকিতে রাজধানীর নয়াপল্টন, পল্টন,  আরামবাগ ও ফকিরেরপুল এলাকা। আবাসিক এলাকা হলেও এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক কাগজের দোকান ও ছাপাখানা। এসব ছাপাখানায় বিরামহীন চলছে কাগজে ছাপার কাজ। যে কোনো সময় এখানেও চুরিহাট্টার মতই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। জীবন ঝুঁকি নিয়েই তারা এই এলাকায় বাস করছেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পল্টন, নয়াপল্টন, আরামবাগ ও ফকিরেরপুল এলাকায় প্রায় দেড় হাজার ছাপাখানা ((প্রিন্টিং প্রেস) ও দুই হাজারের বেশি কাগজের দোকান রয়েছে। এই এলাকার অধিকাংশ সড়কই সরু।
ফকিরেরপুলের গরম পানির গলি, পেপসি গলি, ১নং গলি, কমিশনার গলি ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যেক গলির ভেতরে প্রিন্টিং প্রেস ও কাগজের দোকান। প্রত্যেক দোকানেরই রয়েছে নিজস্ব গোডাউন। যেসব গোডাউনে হাজার হাজার টন কাগজ মজুদ রয়েছে। কিছু প্রেস ও দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার (বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে সৃষ্ট আগুন নেভানোর জন্য) ও এক্সটিংগুইশার (সব ধরনের আগুন নেভানোর জন্য) থাকলেও অনেক  প্রেস ও দোকানেই এক্সটিংগুইশার  দেখা যায়নি।
এলাকার বেশ কয়েকটি প্রেস ঘুরে দেখা গেছে, দিন রাত চলছে প্রিন্টিং মেশিন। প্রতিটি প্রেসেই রয়েছে কর্ড, এমো, জিটিওসহ নানা ধরনের প্রিন্টিং মেশিন। ৪৪০ ভোল্ট বৈদ্যুতিক লাইনের সাহায্যে চলে এসব মেশিন। এই বৈদ্যুতিক লাইন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করলে যে কোনো সময় শর্টসার্কিট হয়ে আগুন লেগে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতে ফকিরেরপুল করিমের মেসে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগে গেলে দুটি প্রতিষ্ঠানের পিভিসি মেশিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাত তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঢাকা পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ গোলাম আজগর বলেন, ‘আগুন বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা অবশ্যই উচিত। যেসব দোকানে কাগজ কেনাবেচা হয়, তার অনেকগুলোতেই পানির লাইন নেই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।’
ফকিরাপুলের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে এখানে থাকি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রিন্টিং প্রেস ও কাগজের দোকান। অত্র এলাকার গলিগুলো অতি সরু। এই গলিগুলোকে দুজন ব্যক্তি পাশাপাশি হাঁটতে পর্যন্ত পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কাগজও ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের মতোই। প্রেস ও কাগজের দোকানে একসঙ্গে আগুন লাগলে তা নেভানো খুবই কঠিন হয়ে হয়ে যাবে।’
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘কাগজ দাহ্য পদার্থ। এসব দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘রাজধানীর সব এলাকাতেই পর্যায়ক্রমে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। আবাসিক এলাকায় প্রেস কারখানা কীভাবে থাকে তা এখনি বলা সম্ভব নয়। তবে যাচাই-বাছাই করে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘কাগজ একটি দাহ্য পদার্থ। প্রেসে ও কাগজের দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রাখা অবশ্যই বাধ্যতামূলক।’

প্রকাশ :মে ২০, ২০১৯ ১২:২২ অপরাহ্ণ